ঢাকা প্রেস
চান্দিনা উপজেলা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:-
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় ছাত্র, যুব, শ্রমিক এবং গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের অংশগ্রহণে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় চান্দিনার পালকি সিনেমা হলের সামনে এই কর্মী সমাবেশের আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদের চান্দিনা উপজেলা শাখা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। তিনি বলেন, "গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ দেশে দখলদারি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করেছে। তাদের পতনের পর নতুন দখলদারদের উত্থান ঘটেছে। কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন মাত্র ৩৬ দিনও টিকতে পারেনি ছাত্র ও জনগণের আন্দোলনের সামনে। যারা এখন নতুন করে দখলদারি চালাচ্ছেন, তাদের পরিণতিও হবে হাসিনার মতোই।"
তিনি আরও বলেন, "২৪ সালের বিপ্লব হঠাৎ করে আসেনি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ১৫ বছরের আন্দোলন শেষে ছাত্র ও জনগণের নেতৃত্বে এই বিপ্লব সফল হয়েছে। ২৪ সালের আন্দোলনের প্রথম দাবিই ছিল ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহাল। কিন্তু সরকারের দমন-পীড়নের ফলে আন্দোলন সরকারের পতনের দিকে মোড় নেয়। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনই ছিল ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেলেও দেশে ও বিদেশে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র করছে।"
আবু হানিফ আরও বলেন, "যে ছাত্ররা আন্দোলন করে হাসিনার পতন ঘটিয়েছে, তারা ঘরে ফিরে যায়নি। আমরা আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিলেও দেশের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। সরকার যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ভুল করে, তবে জনগণ আবারো রাজপথে নামবে এবং যেভাবে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেভাবেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে।"
তিনি আরও বলেন, "সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে সন্দেহ হয়, তারা ওয়ান ইলেভেনের মতো বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে কিনা।"
সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, "জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কুমিল্লায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারকে যথাযোগ্য সম্মান এবং ন্যূনতম ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একদিকে ২ হাজারের বেশি শহীদের রক্তে হাত রঞ্জিত খুনি ওবায়দুল কাদেররা নিরাপদে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে, আর অন্যদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রামের ছাত্রনেতা জসিমকে হত্যা করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলবো, বিপ্লবী ছাত্রজনতার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। শহীদরা যেমন তাদের বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসবে না, তেমনি আওয়ামী লীগ বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপদেষ্টা হওয়ার চেয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী হওয়া আমার কাছে সৌভাগ্যের। জনগণের পাশে দাঁড়ান, তারাই আপনাদের নেতা বানাবে।"
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ কুমিল্লা জেলার সাবেক সদস্য সচিব গিয়াস হৃদয় এবং সঞ্চালনা করেন যুব অধিকার পরিষদ কুমিল্লা উত্তর জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ জামান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা বিভাগীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রূপ হোসাইন মিয়া রাজ, কুমিল্লা জেলার সাবেক আহ্বায়ক ফয়েজুল্লাহ, যুব অধিকার পরিষদ কুমিল্লা উত্তর জেলার সভাপতি আলমগীর হোসেন এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।