কোনটা শিশুর নিউমোনিয়া, কোনটা ঠান্ডা কাশি কীভাবে বুঝবেন ?

প্রকাশকালঃ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:৪৪ অপরাহ্ণ ২১৪ বার পঠিত
 কোনটা শিশুর নিউমোনিয়া, কোনটা ঠান্ডা কাশি কীভাবে বুঝবেন ?

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের যেসব রোগে মৃত্যু বেশি হয়, তার মধ্যে অন্যতম নিউমোনিয়া। সম্প্রতি দেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তির হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শীত এলেই এই দৃশ্য দেখা যায়।

নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অ্যালভিওলাইতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ। এই অ্যালভিওলাইতেই বাতাস থেকে নেওয়া অক্সিজেন ও রক্ত থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত কার্বন ডাই–অক্সাইডের বিনিময় হয়। অ্যালভিওলাইতে সংক্রমণের ফলে এই গ্যাস বিনিময় কমে যায়, রোগী জ্বর, কাশির পাশাপাশি অক্সিজেন স্বল্পতায় ভোগে। এমনকি রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের প্রধানত চারটি লক্ষণ দেখা যায়।

মাঝারি থেকে তীব্র জ্বর।

ভেজা ভেজা কাশি।

শ্বাসকষ্ট। আক্রান্ত শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের খাঁচার নিচের অংশ দেবে যায়।

শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে শিশুর ঠোঁট, জিহ্বা কালচে দেখায়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়।


তাৎক্ষণিক ভালো অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা শুরু না করতে পারলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। মনে রাখতে হবে, যেকোনো কাশির জ্বর নিউমোনিয়া নয়। নিউমোনিয়া ছাড়া শ্বাসতন্ত্রের অন্য সমস্যায়ও কাশি হতে পারে। যেমন—

খাদ্যনালির ওপরের অংশে, গলার পেছনে ভাইরাসের সংক্রমণ বা ফ্যারিঞ্জাইটিস হলে গলা খুশখুশ করে, কাশি হয়, অল্প অল্প গলাব্যথা ও হালকা জ্বর। তেমন শ্বাসকষ্ট থাকে না। একটু লেবু চা, কুসুম গরম পানি এ সমস্যার চিকিৎসায় যথেষ্ট।

শ্বাসনালির ওপরের অংশে, যেখানে আমাদের কণ্ঠস্বর তৈরি হয়, সেখানে ভাইরাসের সংক্রমণ হলে বিশেষ ধরনের ঝন ঝন শব্দে কাশি হয়। এতে শ্বাসনালিতে একধরনের গড়গড় শব্দের সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হয়। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে হাসপাতালে নিতে হবে।

দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের তীব্র কাশির আরেকটা কারণ ব্রঙ্কিওলাইটিস। আক্রান্ত শিশু কাশির পাশাপাশি তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগে। কাশি ও শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো শব্দ হয়। আক্রান্ত শিশুর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা দেখে সে অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়াই মূল চিকিৎসা।

কাশির আরেকটা কারণ হাঁপানি। এতে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কিছুদিন পরপর কাশি হয়, শিশু ঘুমাতে পারে না। শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হয়। নিয়মিত ইনহেলারের মাধ্যমে হাঁপানির জন্য নির্ধারিত ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

শিশুদের মেয়াদি কাশি বা হুপিং কফও কাশির কারণ। মাঝেমধ্যে দীর্ঘদিন কাশি, সঙ্গে হুপ করে একটা শব্দ এবং কাশতে কাশতে বমি করা এ রোগের লক্ষণ। অনেক সময় কাশির তীব্রতায় শিশুর চোখে রক্ত জমে যায়। ইরাইথ্রোমাইসিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দুই সপ্তাহের চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য যত্নে রোগী সেরে ওঠে।

কাশি বা জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক বা কাশির ওষুধ না দিয়ে আগে শিশুকে পর্যবেক্ষণ করুন। নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে বা অবনতি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ