প্রাত্যহিক জীবনে অনেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আবার অনেকে অন্যের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। কেউ কারো থেকে অর্থ ধার নিলে তা যেমন যথাসময়ে পরিশোধ জরুরি, তেমনি কর্মীদের পাওনা টাকাও আদায় করা কর্তব্য।
ইসলামে যত দ্রুত সম্ভব তা আদায় করার নির্দেশ এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক আদায় কোরো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৪৩০)
কাজ করার পর কর্মীকে পাওনা থেকে বঞ্চিত করা গুরুতর পাপ। কর্মীর পাওনা অর্থ আমানত তথা গচ্ছিত সম্পদের মতো।
মহান আল্লাহ এ আমানত যথাযথভাবে আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তোমরা আমানতের হকদারের কাছে পৌঁছে দাও, তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার করলে ন্যায়ের সঙ্গে বিচার করবে...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
হাদিসের বর্ণনা অনুসারে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান থাকবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেব।
প্রথমত ওই ব্যক্তি, যে আমার নামে কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। অতঃপর তা ভঙ্গ করে। দ্বিতীয়ত ওই ব্যক্তি, যে স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য খেয়ে ফেলে। তৃতীয়ত ওই ব্যক্তি, যে কর্মীকে নিয়োগ দেয়। অতঃপর তার থেকে সব কাজ করিয়ে নেয়; কিন্তু মজুরি পুরোপুরি আদায় করে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২২২৭)
কর্মক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে তার পারিশ্রমিক আদায়ে টালবাহানা করা অনুচিত। সামর্থ্যবান হওয়ার পরও কেউ পারিশ্রমিক আদায়ে গড়িমসি করলে তা জুলুমের নামান্তর। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘(ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে) সামর্থ্যবান ব্যক্তির গড়িমসি করা জুলুম করার শামিল। সচ্ছল ব্যক্তির কাছে তোমাদের কারো পাওনা থাকলে সে যেন তার পেছনে লেগে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ২২৮৭)
ইসলাম আমানতের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। তাই কোনো প্রতারকের কাছ থেকে ঋণ নিলে বা কারো কাছে সম্পদ গচ্ছিত রাখলে সেই অর্থও পরিশোধের নির্দেশ রয়েছে। কারণ তা আমানত এবং উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া কর্তব্য। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ তোমার কাছে আমানত রাখলে তা তাকে ফেরত দাও। যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে খিয়ানত করেছে, তুমি তার সঙ্গে খিয়ানত করো না।’ (তিরমিজি, হদিস : ১২৮৭)