স্কুল নয়, যেন মৃত্যুপুরী: উত্তরার দিয়াবড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিষাদের ছায়া

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ জুলাই ২০২৫ ০৩:৪৬ অপরাহ্ণ   |   ৩০ বার পঠিত
স্কুল নয়, যেন মৃত্যুপুরী: উত্তরার দিয়াবড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিষাদের ছায়া

উত্তরার দিয়াবড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিষাদের ছায়া......

একসময় যেখানে ছিল শিক্ষার্থীদের কোলাহল, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা ছিল করিডোর আর মাঠ, সেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন নিঃস্তব্ধতায় ঢাকা এক মৃত্যুপুরী। উত্তরা দিয়াবড়ির এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ আর নেই প্রাণের স্পন্দন—আছে শুধু হাহাকার, পোড়া গন্ধ আর অজস্র অশ্রু।
 

স্কুলের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে শিশুরা ব্যবহৃত বই-খাতা, ব্যাগ, জুতো, পানির বোতল, এমনকি রংতুলিতে আঁকা তাদের স্বপ্নের ছবিগুলো। এসব যে হাতে ছিল, সেই কোমলমতি অনেকেই আজ না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে, কেউবা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালের বিছানায়।
 

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা ক্যাম্পাস। চারপাশে শুধুই শোক আর স্তব্ধতা।
 

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসের প্রাথমিক শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনও পড়ে আছে বিভীষিকার নানা চিহ্ন। তৃতীয় শ্রেণির ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’ কিংবা ‘বাংলা ব্যাকরণ’ বই পুড়ে গেছে আংশিক, খাতার পাতাগুলো আগুনে ঝলসে গেছে, কোথাও কোথাও এখনও দৃশ্যমান কারও নাম। সিঁড়ির পাশে পড়ে আছে শিশুরা ব্যবহৃত স্কুলব্যাগ, চারদিকে ছড়িয়ে পোড়া কাগজ ও প্লাস্টিকের গন্ধে ভারি হয়ে আছে বাতাস।
 

অভিভাবক ও আশপাশের মানুষের চোখেমুখে আতঙ্ক আর বেদনার ছাপ স্পষ্ট। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ কাঁদছেন নীরবে। শাহনাজ শরিফ নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘এগুলো আমাদের সন্তানের বই। গতকালও তো তারা এই স্কুলেই ছিল। আজ এখানে শুধু ছাঁই আর পোড়া গন্ধ। যে স্কুল আশ্রয়দাতা হওয়ার কথা, সেটাই এখন মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
 

স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর মিঞা, যিনি উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন, ‘শিশুদের কান্নার শব্দ শুনেই ছুটে যাই। ধোঁয়ার মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যারা বেঁচে ফিরেছে, তারা জানায়—ভেতর থেকে বের হওয়ার পথই খুঁজে পায়নি।’
 

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুর ১টার কিছু পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় বিমান ও ভবনে। তখন শ্রেণিকক্ষে থাকা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হতাহত হয়।
 

এই দুর্ঘটনা শুধু প্রাণ কেড়ে নেয়নি, ভেঙে দিয়েছে শত শত পরিবারের স্বপ্ন, আর নীরবে কাঁদিয়ে গেছে একটি প্রজন্মকে।