ঢাকা প্রেস
সিরাজুল ইসলাম রতন,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:-
দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই প্রথম গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের সেবার মান বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অধীনস্থ ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন (এলএ) শাখা-তে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং হয়রানিমুক্ত সেবার নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যেখানে ঘুষ ও দালাল চক্রের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজ করতে বাধ্য করা হতো, সেখানে এখন সরকারি নিয়ম মেনে সহজেই সেবা পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
বর্তমান জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতি রোধ ও জনসেবার মানোন্নয়নে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যার ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি কমেছে।
সাসেক (সাউথ এশিয়ান সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অতীতে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের ফলে এখন মানুষ হয়রানি ছাড়াই দ্রুত তাদের প্রাপ্য চেক ও কাগজপত্র হাতে পাচ্ছেন এমনটি বলছেন গাইবান্ধা জেলার মানুষ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নারায়ণ চন্দ্র বলেন, সাসেক প্রকল্পের জন্য আমার জমি অধিগ্রহণের পর আমি প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমি দ্রুতই আমার প্রাপ্য চেক হাতে পেয়েছি, এবং এই পুরো সময়জুড়ে আমাকে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়নি বা কাউকে কোনো ঘুষ দিতে হয়নি। সরকারের এই কার্যক্রমে আমি খুবই সন্তুষ্ট, কারণ এটি দুর্নীতিমুক্ত ও সহজভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক।
পলাশবাড়ী উপজেলার সুরুজ হক লিটন জানান, আমি আমার জমি ও স্থাপনার চেক গ্রহণ করেছি এবং এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার দালালের সহায়তা নিতে হয়নি। সরকারি নিয়ম মেনে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমি আমার প্রাপ্য বুঝে পেয়েছি। এলএ (ভূমি অধিগ্রহণ) শাখার কর্মকর্তারা অত্যন্ত আন্তরিক ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেছেন, যা আমাকে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে।
হোসেনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌফিকুল আমিন মন্ডল টিটু বলেন, আমি জমি অধিগ্রহণ ও স্থাপনার চেক পেয়েছি এবং এ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হইনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবসময় আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জহির ইমাম বলেন, আমরা সবসময় জনগণের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শুনি এবং তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি। জনগণের সুবিধার্থে প্রতিটি সরকারি কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে এবং সকল আইনি ও বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। এতে করে সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষকে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণ যাতে সহজে, স্বচ্ছ এবং দ্রুততার সঙ্গে সরকারি সেবা পায়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের সেবার মান বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগণ এখন হয়রানি ছাড়াই সরকারি সেবা পাচ্ছেন। অতীতের তুলনায় এখন সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং স্বচ্ছ হয়েছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় হবে। এই উদ্যোগ গাইবান্ধায় প্রশাসনিক সেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা অন্যান্য জেলাগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদ বলেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য একটি স্বচ্ছ, দক্ষ এবং হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করা। আমি এই জেলায় যোগদান করার পর থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষত, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণভাবে সরকারি নিয়ম মেনে এবং দুর্নীতিমুক্ত হয়ে ওঠেছে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা প্রতিদিন জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি, এবং আশা করছি, এই ধারাটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু জনগণের আস্থা অর্জন নয়, বরং তাঁদের সেবা দেওয়া এবং একটি উন্নত জেলা হিসেবে গাইবান্ধাকে গড়ে তোলা।