সাদ্দাম উদ্দিন রাজ,নরসিংদী জেলা:-
নরসিংদীতে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই),নরসিংদী। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করেছেন তারা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে পিবিআই নরসিংদী কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার পাঁচই গ্রামের ফরিদ হোসেনের ছেলে রমজান শেখ (২২) ওরফে লিমন, তার ভাই হাসিবুর রহমান (৩১) ওরফে শান্ত, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার গন্ডা গ্রামের ইনসান মিয়ার ছেলে কাউসার মিয়া (২০) ও নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া থানার চর গোয়াশ গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ইমন আলী (২১)। এসময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত হওয়া নগদ ১০,০১১০০ (দশ লক্ষ একহাজার একশত) টকা, ৫টি মোবাইল সেট এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ১ জোড়া হাতের গ্লাভস, ৩ টুকরো রশি, মুখের মাক্স এবং ১টি হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়।পুলিশ সুপার (ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, সুমনা আক্তার তিথি। বয়স ১৩ বছর। নরসিংদী সদর উপজেলার শেখেরচর এলাকার মোফাজ্জল হোসেনের মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে। গত ২৭ জানুয়ারী রাত সাড়ে ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা বাড়ীর ভিতর ঢুকে সুমনা আক্তার তিথি(১৩) ও তার মা আসমা আক্তার (৪৫) কে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় সুমনা আক্তার তিথি ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং মা গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উক্ত ঘটনার পর নরসিংদী মডেল থানায় মামলা দায়ের পর পিবিআই নরসিংদী কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একাধিক দল নরসিংদী, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ফরিদপুর, মাদারীপুর সহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করে ফরিদপুর থেকে রমজান শেখ ওরফে লিমন ও তার ভাই হাসিবুর রহমান শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে অপর আসামী কাউসার মিয়া ও ইমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে এ ঘটনার সাথে তারা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তাদের দেখানো মতে বাদীর লুন্ঠিত হওয়া নগদ দশ লক্ষ একহাজার একশত টাকা উদ্ধার করেন। তিনি আরও জানান, আসামী লিমনের সাথে বাদীর পূর্বপরিচিত। বাদীর বড় মেয়ে বিদেশে থাকার সুবাদে বিকাশের মাধ্যমে বাদীর নিকট টাকা পাঠাতেন। বিকাশ থেকে ওই টাকা তুলে বাদী ঘরে নিয়ে রাখেন। তা জানতেন লিমন। টাকার প্রতি লোভ হয় তার। বিষয়টি আলাপ আলোচনা করেন অপর আসামী কাউসারের সাথে। পরে তারা নিকটস্থ গাঙ পাড়ে বসে আরও দু'জনের সাথে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৭ জানুয়ারী রাতে ৪ জন মিলে এঘটনা ঘটায়। আসামীরা কিশোরী তিথিকে হাতুড়ি দিয়ে মাথা ও মুখমন্ডলে এবং তার মা আসমা আক্তারকেও একই কায়দা আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে। এতে ঘটনাস্থলেই কিশোরী তিথি মারা যায়। পরে আসামীদের পুলিশী প্রহরায় আদালতে প্রেরণ করলে উক্ত আসামীরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারী শেখেরচরে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতর মা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার শেখেরচর (বাবুরহাট) বাজারের এবতেদাদিয়া মাদ্রাসার পূর্ব পাশে মোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন শেখেরচর পুলিশ ফাঁড়ীর পরিদর্শক মোঃ মাসুদ আলম। এতে মোফাজ্জলের মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে সুমনা আক্তার তিথি (১৩) নিহত এবং তার স্ত্রী আসমা আক্তার (৪০) গুরুত্বর আহত হয়। খবর পেয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কারুজ্জামান ও পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।