পাবনা প্রতিনিধি:-
সরকারি জায়গা কিংবা হাটবাজার দখলের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু স্কুলের আঙিনা দখল করে সেখানে বাড়ি নির্মাণের ঘটনা বিরল। এমনই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নে। স্থানীয় নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছেন আব্দুল বাতেন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর চাচাতো ভাই। কর্মী হয়েও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নেতার মতো প্রভাব বিস্তার করেন তিনি।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষকরা সুনামের সঙ্গে পাঠদান চালিয়ে আসছিলেন। ২০১০ সালে আব্দুল বাতেন প্রথমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অফিস করার নাম করে স্কুল মাঠে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ইট-বালু এনে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী এর বিরোধিতা করলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি ভয়ভীতি দেখান। শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা থেকে শুরু করে হত্যার হুমকিও দেন বাতেন। এভাবেই গড়ে ওঠে স্কুল মাঠে তিনতলা ভবন।
বর্তমানে শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটি স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবনের পূর্ব দিকে স্কুলের একটি টিনশেড ঘর, পশ্চিম দিকে আরেকটি টিনশেড ঘর। এমনকি বাতেনের বাড়িতে প্রবেশের পথও স্কুলের জমি দিয়েই, ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ গেটও করতে পারছে না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বাড়ি নির্মাণের সময় তারা বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাতেন এসব করেছে। তারা জানান, বাড়িটি অপসারণ না হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল বাতেন জানান, তিনি স্কুলের জমিদাতার কাছ থেকে ২০২২ সালে প্রায় ৪ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০২ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ৯ জন দাতার জমি দানেই স্কুলটি গড়ে ওঠে। বাতেন ২০১৩ সালের দিকে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করেন এবং ২০২২ সালে ভুয়া দলিল তৈরি করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কোনো ব্যক্তিগত বাড়ি হতে পারে না। যেখানে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে সেখানে কারও বসবাসের জায়গা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”