জার্মান স্টুডেন্ট ভিসায় কিভাবে যাবেন?

প্রকাশকালঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:৫৬ অপরাহ্ণ ৪৫০৫ বার পঠিত
জার্মান স্টুডেন্ট ভিসায় কিভাবে যাবেন?

বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি দেশ উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে তার মধ্যে জার্মানি অন্যতম। জার্মানি ইউরোপের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী ও শিল্পোন্নত সেনজেনভুক্ত একটি দেশ। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও পযুক্তিতে জার্মান জাতি অনেক উন্নত। এর রাজধানী বার্লিন। দেশটির প্রধান ভাষা হচ্ছে জার্মান। দেশটির ১৬ টি রাজ্য রয়েছে। এর আয়তন ৩,৫৭,১৬৮ বর্গ কিঃমিঃ এবং জনসংখ্যা ৮,১৪,৫৯,০০০ (২০১৫ পর্যন্ত)। দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় ৪৭,০৩৩ মার্কিন ডলার (২০১৫ পর্যন্ত) এবং স্বাক্ষরতার হার ৯৯%। দেশটির উত্তরে ডেনমার্ক ও বাল্টিক সাগর, দক্ষিণে অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড, পূর্বে চেক  প্রজাতন্ত্র ও পোল্যান্ড, পশ্চিমে ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড অবস্থিত। দেশটির আয়তন ৮৩,৮৭৯ বর্গ কিঃমিঃ এবং জনসংখ্যা ৮৬,৬২,৫৮৮ (২০১৫ পর্যন্ত)। এখানকার শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীর কাছেই জার্মানি একটি স্বপ্নের দেশ। এদেশে উচ্চ শিক্ষার অন্যতম সুবিধা হলো এখানে কোন প্রকার টিউশন ফি লাগে না। যদি ইউরোপে উচ্চশিক্ষা ও উন্নত ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবে থাকেন, তাহলে জার্মানি হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ দেশ।

 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ও অন্যান্য তথ্যাবলী

জার্মানির শিক্ষার মান খুবই উন্নত। বিশেষ করে দেশটি প্রযুক্তির জন্য সারা বিশ্বে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। তাইতো জার্মানিকে বলা হয় “ Land of Ideas or Land of Engineers ”। জার্মানিতে অনেক বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

এখানে প্রায় ৯০% বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে কোন প্রকার টিউশন ফি দিতে হয় না। তবে সেমিস্টার ফি বাবদ প্রতি সেমিস্টারে ১৫০ - ৪০০ ইউরো এর মত লাগে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মাধ্যম জার্মান, তবে অনেক প্রোগ্রাম ইংরেজি মাধ্যমেও পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত বছরে ২ বার আবেদন করা যায়। একটি সামার যার সময়সীমা (১ ডিসেম্বর - ১৫ জানুয়ারী) এবং অন্যটি উইন্টার, সময়সীমা (মে - ১৫ জুলাই)। ভাষার যোগ্যতা হিসেবে IELTS 6 or German Language B1 অথবা দুটাই লাগে। তবে IELTS 6.5 (Each module 6 minimum) থাকলে আপনি ভিসার ক্ষেত্রে SAFE ZONE এ থাকবেন। কোন কোন ইউনিভার্সিটি/সাবজেক্ট এর জন্য GRE ও লাগে। আর এক বছরের থাকা—খাওয়া খরচ বাবদ আপনাকে ৮৬৪০ ইউরো ব্লক একাউন্টে রাখতে হবে। আর ব্লক একাউন্টটা করতে হবে জার্মানিতে।

 

 

ব্লক একাউন্ট মানে হচ্ছে আপনি টাকা টা চাইলেই একাউন্ট থেকে উঠাতে পারবেন না। তবে ভিসা পেলে আপনি জার্মানিতে গিয়ে প্রতি মাসে ৭২০ ইউরো করে ব্লক একাউন্ট থেকে ১ বছরে পুরো টাকা (৮৬৪০ ইউরো) তুলতে বা দেশে পাঠাতে পারবেন। এইটা স্টেট/সিটি অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। 

জার্মানিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা HSC পাশের পর সরাসরি ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেনা। তবে HSC পাশের পর বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ বছর (ডিপ্লোমা পাশকৃতদের ক্ষেত্রে ১ বছর) পড়ার পর সরাসরি ব্যাচেলরে ভর্তি হতে পারবে । আরও নির্দিষ্ট করে বললে আপনাকে বাংলাদেশে কোন ইউনিভার্সিটিতে আপনার ব্যাচেলর কোর্সের ৫০% ক্রেডিট শেষ করতে হবে (যেমন: ব্যাচেলরের ফুল কোর্সের ক্রেডিট যদি ১৫০ হয় তাহলে ৭৫ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হবে)।

আর কেউ যদি HSC এর পরই জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চায় তাহলে তাকে জার্মানিতে গিয়ে প্রথমে স্টুডেন্ট কলিগ (Studienkolleg) করতে হবে। তারপর তাকে একটা Entrance Exam দিতে হবে, উপযুক্ত নম্বর পেলেই কেবল ব্যাচেলর শুরু করতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য আপনার সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস শিক্ষা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং জার্মান এমব্যাসি  ঢাকা থেকে সত্তয়ন করতে হবে। অথবা নোটারি করলেও হয়।

 


জার্মানিতে আপনি ৩ ধরণের স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে পারবেন

Students visa (Fix term Language course): এই ভিসায় সাধারন ৩/৬ মাসের হয়ে থাকে। কোনভাবেই আপনি এই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জার্মানিতে থাকতে পারবেন না। কারন আপনি ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারবেন না । ফিক্স করে দেয়া । এই ভিসাতে কোন কাজের অনুমতি নেই।

Students Applicant Visa: যারা প্রথমে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স করে পড়ে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবেন বলে জার্মানিতে আসতে চান তাদের জন্য । উদ্দেশ্য জার্মান ভাষা শিখে জার্মান ইউনিভার্সিটি তে স্টাডি করবেন । জার্মান ভাষায় B2 সম্পূর্ণ করে (European Framwork Level 2), একটা পরিক্ষা দিয়ে উপযুক্ত নম্বর পেলেই মেইন কোর্স শুরু করতে পারবেন। এই ভিসাতেও আপনি কোন কাজের অনুমতি পাবেন না।

Student Visa (Direct admission to University): এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যারা সরাসরি ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে আসে । আপনি এই ভিসায় আসলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন । কাজের ক্ষেত্রে ও কোন সমস্যা হবে না। তাই সবাইকে অনুরোধ করবো যথাসাধ্য চেষ্টা করেন যেন সরাসরি ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে আসতে পারেন ।

 


 

টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচ

এদেশে উচ্চ শিক্ষার্থে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন টিউশন ফি লাগে না। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি সেমিস্টারে  ১৫০ - ৪০০ ইউরো প্রয়োজন হয়। এছাড়া থাকা, খাওয়া, বইপত্র ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৬০০ - ৭০০ ইউরো খরচ হতে পারে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে ১২০ পূর্ণ দিবস বা ২৪০ অর্ধ  দিবস পার্ট টাইম কাজের অনুমতি আছে। তবে সামারে ৩ মাস ছুটিতে ফুলটাইম কাজ করা যায়। জার্মান ভাষা ভাল জানা থাকলে পার্ট টাইম কাজ করে খুব সহজেই নিজের খরচ ও সেমিস্টার ফি চালানো যায়। পড়াশোনা শেষে আপনি ১.৫ বছরের জব সার্চ ভিসা পাবেন। জার্মানিতে একটানা বৈধভাবে ৫ বছর থাকার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) জন্যে আবেদন করতে পারবেন এবং ৮ বছর পর নাগরিকত্বের জন্যে আবেদন করতে পারবেন।