সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে থাকা ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি: বিজ্ঞানীদের সতর্ক বার্তা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০১ অপরাহ্ণ   |   ৮২ বার পঠিত
সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে থাকা ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি: বিজ্ঞানীদের সতর্ক বার্তা

অনলাইন ডেস্ক:-

 

গ্রিসের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সান্তোরিনি, তার সাদা-নীল বাড়ি, নীল সমুদ্র আর মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের জন্য বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের স্থান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই দ্বীপে ছুটে আসেন এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে এই স্বপ্নের দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর বাস্তবতা—একটি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা যে কোনো সময় জেগে উঠতে পারে।
 

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে একটি ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত এই দ্বীপের বর্তমান ভূ-প্রকৃতি গড়ে দেয়। সেই বিস্ফোরণের ফলে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে তৈরি হয়েছিল একটি বিশাল কালডেরা। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি এই অঞ্চলে।
 

তবে গত বছর থেকে কয়েকবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্পগুলো আগ্নেয়গিরির নিচে ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
 

এ পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল সান্তোরিনির আশপাশের সমুদ্রতল ও আগ্নেয়গিরির ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তার ভাষায়, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে বোঝা, কখন তা বড় বিস্ফোরণের দিকে যাচ্ছে।”
 

গবেষক দলটি রোবট ব্যবহার করে সাগরের ৩০০ মিটার গভীর থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় শিলা সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি ভূমিকম্প এবং লাভার চলাচল পর্যবেক্ষণ করে ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করা হচ্ছে।
 

সান্তোরিনি দ্বীপ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের নিচে থাকা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ‘কলোম্বো’ নিয়েও নজরদারি চলছে। এই গবেষণার তথ্য গ্রিস সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে, যা দেশটির সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে কাজে লাগাবে।
 

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত সান্তোরিনির বাসিন্দা ও জরুরি পরিকল্পনার সরকারি কর্মকর্তা অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো বলেন, “গবেষণার ফলাফল আমাদের জানাবে কোথায় কতটা ঝুঁকি রয়েছে, এবং কোথায় নাগরিকদের প্রবেশ সীমিত করতে হবে।”
 

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রভাবে দ্বীপটির প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দা দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল জানান, অনেক পর্যটক ও ক্লায়েন্ট তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ ও ফটোশুট বাতিল করেছেন।
 

তবুও, সান্তোরিনির মোহনীয় সৌন্দর্য অনেককেই আবার টেনে আনছে ফিরে। দ্বীপে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, “আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!”
 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও, এটি "শুধু সময়ের ব্যাপার।"

সূত্র: বিবিসি