নোয়াখালীকে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন নোয়াখালী জেলা এবং ঢাকায় বসবাসরত নোয়াখালীবাসী। শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একইদিনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাতেও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীতে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা স্লোগান দেন— “দাবি মোদের একটাই, নোয়াখালী বিভাগ চাই।” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। তিনি বলেন, “নোয়াখালী বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশের জিডিপিতে বৃহত্তর নোয়াখালীর শিল্পপতিদের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ, আর প্রবাসী আয়ের প্রায় অর্ধেকই আসে এই অঞ্চল থেকে। তাই নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণা করা সময়ের দাবি।”
বুলু আরও বলেন, “আমাদের দাবি কোনো বিভেদের নয়, এটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। খালেদা জিয়া বৃহত্তর নোয়াখালীর কৃতি সন্তান। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারেক রহমান মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নোয়াখালীকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করবেন।”
বক্তারা বলেন, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের জেলা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক বিভাগ গঠন এখন অত্যন্ত জরুরি। জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক প্রয়োজন বিবেচনায় এই অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আলাদা বিভাগ অপরিহার্য। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে নোয়াখালী অঞ্চল বঞ্চিত। বক্তাদের মতে, পৃথক বিভাগ হলে এসব খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তারা ঘোষণা দেন, “নোয়াখালী বিভাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়ও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে উপজেলা চত্বরে ব্লকেড কর্মসূচির পর বসুরহাট জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন হয় এবং পরে বিক্ষোভ মিছিল বসুরহাট বাজার প্রদক্ষিণ করে।
মানববন্ধনে অংশ নেন বিএনপি নেতা ও নোয়াখালী-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ফখরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, জেলা বিএনপির সদস্য ও বসুরহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মতিন লিটন, সাবেক উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন এবং পৌর জামায়াতের আমির মোশাররফ হোসাইন প্রমুখ।
বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসনিক দক্ষতা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনতে নোয়াখালীকে পৃথক বিভাগ ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু বিভাগের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।”
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকায় মানববন্ধন শেষে নোয়াখালীগামী একটি বাস কুমিল্লার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড এলাকায় স্থানীয়দের দ্বারা আটকানো হয়। অভিযোগ, ওই বাসের যাত্রীরা কুমিল্লা নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন। পরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিম উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করেন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নোয়াখালী বিভাগের পাশাপাশি কুমিল্লার লোকজনও আলাদা বিভাগ গঠনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ‘নোয়াখালী বিভাগ চাই’ লেখা ব্যানারসংবলিত বাসটি দেখে কিছু কুমিল্লাবাসী প্রতিবাদ জানালে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।