প্রকাশকালঃ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:২৭ অপরাহ্ণ ২১৪ বার পঠিত
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব আল্লাহর হাবিব রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি ছিলেন সাইয়েদুল মুরসালিন, রহমাতাল্লিল আলামিন। তিনি ছিলেন সর্বোত্কৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। তাঁর সর্বোত্কৃষ্ট চরিত্রের সুনাম করে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত। (সুরা আল কলম, আয়াত : ৪)
তিনি ছোট থেকে বড়, সবার সঙ্গে অত্যন্ত মাধুর্যপূর্ণ আচরণ করতেন। তাঁর আচরণে মুগ্ধ হয়ে চরম শত্রু পরম বন্ধুতে পরিণত হতো। তিনি সবাইকে গুরুত্ব দিতেন, কেউ কিছু বলতে চাইলে তিনি খুব গুরুত্বসহ তার কথা শুনতেন। আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তির সঙ্গেও পূর্ণ মনোযোগ ফিরিয়ে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে কথা বলতেন।
এমনকি আমার সঙ্গেও তিনি কথা বলতেন অনুরূপভাবে। তাতে আমার মনে হলো, আমি সমাজের উত্তম মানুষ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ভালো, না আবু বকর ভালো? তিনি বললেন, আবু বকর! আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ভালো, না উমার ভালো? তিনি বললেন, উমার! আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি ভালো না উসমান? তিনি বললেন, উসমান! আমি যখন বিস্তারিতভাবে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন আমাকে সঠিক কথা বলে দিলেন। পরে আমি মনে মনে কামনা করলাম, যদি আমি তাঁকে এরূপ প্রশ্ন না করতাম। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস ; ২৬৪)
সহযোদ্ধা সাহাবায়ে কেরামের প্রতি তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। তাঁর পরিবার থেকে শুরু করে খাদেম পর্যন্ত কেউ কখনো তাঁর কটু আচরণের শিকার হননি। হাসান ইবনে আলী (রা.) বলেন, হুসাইন ইবনে আলী (রা.) বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসুল (সা.)-এর সাথীদের ব্যাপারে তাঁর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও বিনম্র স্বভাবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না।
তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না, অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াতেন না এবং কৃপণ ছিলেন না। তিনি অপছন্দনীয় কথা হতে বিরত থাকতেন। তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না, আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন—ঝগড়া-বিবাদ ও অহংকার করা এবং অযথা কথা বলা। তিনটি কাজ থেকে লোকদের বিরত রাখতেন—কারো নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করতেন না। যে কথায় সওয়াব হয়, শুধু তা-ই বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন যেন তাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে।
তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করত না। কেউ কোনো কথা বলা শুরু করলে তার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোনো কথায় হাসলে বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও হাসতেন কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির দৃঢ় আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করতেন। কখনো কখনো সাহাবিরা অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসুল (সা.) বলতেন, কারো কোনো প্রয়োজন দেখলে তা সমাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা শুরু করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে নিষেধ করে দিতেন, অথবা মজলিস হতে উঠে যেতেন, যাতে বক্তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯)
প্রিয় নবীজি (সা.) এতটাই বিনয়ী ছিলেন যে তিনি কখনো ভিক্ষুকের সঙ্গেও রূঢ় ভাষায় কথা বলেননি। একবার এক বেদুইন ভিক্ষুক তাঁর চাদর ধরে টান দিয়ে শরীরে দাগ ফেলে দিলেও তিনি তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। বরং তাকে হাসিমুখে সদকা দিয়ে বিদায় করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০৮৮)