মূল্যস্ফীতি কমানোই অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রকাশকালঃ ০৯ আগu ২০২৩ ০৪:৩৫ অপরাহ্ণ ২৪০ বার পঠিত
মূল্যস্ফীতি কমানোই অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ।

মূল্যস্ফীতি কমানোই এখন অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারকে মেয়াদের শেষ বছরে এসে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই চাপ সামলাতে হবে।

দেশের মানুষ এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্রভাবে অনুভব করছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে এই চাপের শুরু। এই সময়ের মধ্যে কোনো মাসেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশের নিচে নামেনি।

এক বছর ধরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। এর মানে হলো, দেশের মানুষকে এক বছর ধরে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এটি সরকারি হিসাব। তবে গরিব মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চাপ আরও বেশি।

মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে পরের মাসেই ব্যাপক হারে কমে যাবে, তা আশা করা যায় না। সাধারণত উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা, আয় বৃদ্ধি—এসবের ওপর ভিত্তি করেই মূল্যস্ফীতি কমে। তাই শিগগিরই মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশে নেমে যাওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া এখন বর্ষাকাল চলছে। তাই নতুন চাল বাজারে আসতে আরও আড়াই-তিন মাস লাগবে। এই সময়ে পুরোনো চালের মজুতেই ভরসা। তাই চালের দাম কমার সম্ভাবনা কম। বর্ষায় শাকসবজির জোগানও কম থাকে, যা গরিব মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গরিব মানুষকে চালসহ খাদ্যপণ্য কিনতেই আয়ের বেশির ভাগ খরচ করতে হয়। এর মধ্যে চাল কিনতেই আয়ের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয়। শুধু চালের দামই গরিব মানুষদের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়।

মূল্যস্ফীতি কমানোই এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকারকে মেয়াদের শেষ বছরে এসে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই চাপ সামলাতে হবে। ভোটের বছরে মানুষের কাছে জিনিসপত্রের দাম বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এখন নিত্যপণ্যের দাম কীভাবে কমানো যাবে, সেদিকেই নজর দিতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

গত ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মূল্যস্ফীতি কমানোর উপায় খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, অর্থনীতিতে এখন দুটি প্রধান উদ্বেগ আছে। একটি হলো বিদ্যুতের সমস্যা, অপরটি মূল্যস্ফীতি। স্বীকার করে বসে থাকলে চলবে না। মূল্যস্ফীতি আর বাড়তে দেওয়া যাবে না; বরং কমাতে হবে।


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলোও মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভুগেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ভারতের মতো দেশগুলো মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিয়ে ফেলেছে। গত ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে, যুক্তরাজ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৭ শতাংশে, জার্মানিতে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে, ভারতে সাড়ে ৬ থেকে সোয়া ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি গত জানুয়ারিতেও বড় সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫১ শতাংশ। তা কমে এখন ২৫ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমেনি বললেই চলে। মাসওয়ারি হিসাবে, একটু কমলেও পরে আবার তা বেড়েছে।

গত জুলাইয়ে বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গত রোববার প্রকাশিত বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা এর আগের মাস জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা জুনে ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মানে, জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিঞ্চিৎ কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি খানিক বেড়েছে।

এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তা বেশ উদ্বেগের। একদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ল, অন্যদিকে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমল—এই তথ্য-উপাত্ত ঠিক মিলছে না। তাঁর মতে, নির্বাচনের বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আপনার যদি আয় বাড়ে, তাহলে বাড়তি মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে কষ্ট হয় না। কিন্তু আয় বৃদ্ধির তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে দৌড়ে পেরে উঠছে না মজুরি বৃদ্ধি। সাধারণত মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি থাকে। তাতে বাড়তি দামেও পণ্য কিনতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু প্রায় এক বছর আগেই মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে মূল্যস্ফীতি।