প্রকাশকালঃ
২০ মে ২০২৩ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ ১২০ বার পঠিত
দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলে পল্লী ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তর যৌথভাবে সভা ও মাইকিং করে জেলেদের সচেতন করেছে। এরই মধ্যে উপকূলে ভিড়তে শুরু করেছে জেলেদের ট্রলার।
নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের ৮৬ কেজি চাল সহায়তা দেয় সরকার। জেলেরা বলছেন, এই চাল নিয়ে একটা জেলে পরিবার ৬৫ দিন চলতে পারে না। আবার মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। অনেকে বরাদ্দের পুরো চালও পান না। এ ছাড়া অনেকে দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকলেও জেলে হিসেবে নিবন্ধন না হওয়ায় বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই বরাদ্দের চাল সঠিকভাবে বণ্টন এবং এর সঙ্গে আর্থিক সহায়তার দাবি জানান জেলেরা।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের জেলে মো. নিজাম বলেন, তিনি ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। কিন্তু এখনো জেলে কার্ড পাননি। তাই নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোনো সহায়তা পান না। তাঁর সাত সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। কিস্তি পরিশোধে এই সময়ে বিপাকে পড়তে হয় তাঁকে।
একই এলাকার জেলে মো. মনিরুল ইসলাম মাঝি বলেন, বরাদ্দের চাল জেলেরা ঠিকমতো পান না। তাই অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যান।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৯৫০ জন। তাঁদের বরাদ্দের চাল আগামী ১৫ জুনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
এদিকে বরগুনার মত্স্যজীবী নেতারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতের জেমলরা দেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করেন। এটি ঠেকাতে না পারলে নিষেধাজ্ঞায়ও সুফল আসবে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলছেন, প্রকৃত জেলেদের সহায়তার পাশাপাশি ভিনদেশি জেলেদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবেন তাঁরা। জেলায় ২৭ হাজার ২৫০ জন জেলেকে এক হাজার ৫২৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে ৫৬ কেজি চাল দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে। তাই ওই অঞ্চলে নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।’
পটুয়াখালীর গলাচিপায় প্রায় ১২ হাজার জেলে তীরে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেলে মো. মালেক বলেন, ‘আমরা সরকারের ঘোষণা শুনেই কূলে (তীরে) চইল্লা আইছি। এই ৬৫ দিন আমরা কোনো মাছ ধরমু না।’
কুয়াকাটা সৈকতের জেলে মো. সোহাগ বলেন, ‘আমরা হয়তো আর এই পেশায় টিকে থাকতে পারব না। তিন বছর ধরে সমুদ্রে মাছের আকাল এবং ঘন ঘন দুর্যোগ আর আট মাস ধরে জাটকা ইলিশ শিকার বন্ধের অভিযান চলছে। আবার শুরু হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে নিষেধাজ্ঞায় বাগেরহাটের শরণখোলাসহ উপকূলের মৎস্য পল্লীতে দেখা দিয়েছে হতাশা। ইলিশের মৌসুম শুরু হতে না হতেই এই নিষেধাজ্ঞায় হতাশায় পড়েছেন জেলে-মহাজনরা।
শরণখোলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘বৈশাখ মাস থেকেই শুরু হয় ইলিশের মৌসুম। প্রতিবছর মৌসুমের শুরুতে জাল-টঞ্চলার মেরামতে প্রত্যেক মহাজনের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা খরচ হয়। এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। ঠিক এই সময় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য কাল হয়ে দেখা দেবে।’