প্রকাশকালঃ
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:০৩ অপরাহ্ণ ২৮৬ বার পঠিত
সাম্প্রতিক সময়ে নগদ ডলারের সংকট থেকেই কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা বলছেন, বিনিময় হারে সুবিধা পাওয়া যায়।
বিদেশ ভ্রমণে নগদ বৈদেশিক মুদ্রার খরচের পাশাপাশি কার্ডেও বৈদেশিক মুদ্রার খরচের প্রবণতা বাড়ছে। নগদ নোট পরিবহনের ঝামেলা এড়াতে এখন অনেকেই বিদেশে গিয়ে কার্ডের মাধ্যমে খরচের বিল পরিশোধ করেন। এমনকি প্রয়োজন পড়লে বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে কার্ডের মাধ্যমে নগদ বৈদেশিক মুদ্রার উত্তোলন করেও কাজ সারা যায়। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রেও তুলনামূলক সুবিধা পান কার্ডের গ্রাহকেরা। আর নানা কাজে এখন মানুষের বিদেশ যাওয়াও বাড়ছে। সব মিলিয়ে তাই কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে সবচেেয় বেশি ব্যবহার হয় ডলার।
কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। সেই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে কার্ড ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করেছেন ৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ছিল ২ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশে গিয়ে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার খরচের প্রবণতা বেড়েছে ১২৭ শতাংশ, যা পরিমাণে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
এই সময়ে শুধু লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে, তা-ই নয়। বেড়েছে লেনদেনের সংখ্যাও। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট লেনদেন হয়েছে ৯২ লাখ ৩৭ হাজার। এর আগের অর্থবছরে লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে লেনদেনের সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ লাখ ৪৭ হাজার। বিদেশে গিয়ে একজন বাংলাদেশি সাধারণত এক বছরে ১২ হাজার ডলার বা এর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে পারেন। নগদ বৈদেশিক মুদ্রা কিংবা কার্ড ব্যবহার করে এই পরিমাণ অর্থ খরচের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ফেব্রুয়ারিতে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৭৩ কোটি টাকা খরচ করেছেন। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। ভারতের পর বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কার্ডে বেশি খরচ করেন।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নগদ ডলােরর সংকট থেকেই কার্ডে ৈবদেশিক মুদ্রার ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে সঙ্গে সঙ্গেই তা ব্যাংককে পরিশোধ করা লাগে না। আবার বিনিময় হারেও কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়। সে জন্য দেশের বাইরে কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে।
একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ও কয়েকটি ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিদেশে গিয়ে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ করার পর ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১০ টাকা হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে এটা দুই-এক টাকা কমবেশি হয়ে থাকে। সেখানে খোলাবাজার থেকে নগদ ডলার কিনতে হলে প্রতি বৈদেশিক মুদ্রারে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশিরা এখন ঘোরাঘুরি তো বটেই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পড়াশোনাসহ নানা কাজে দেশের বাইরে যাতায়াত করেন। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন তাঁরা। বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে খরচের প্রবণতা নিয়ে গত জুনে প্রথমবারের মতো করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচের চার ভাগের এক ভাগ হয় ভারতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৭৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন। পরের মাসে, অর্থাৎ মার্চে এভাবে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ। ভারতের পর বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বেশি খরচ করেন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ভিসা কার্ড। এরপর ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স কার্ড, ডাইনারস কার্ড, ইউনিয়ন পে ও জেসিবি কার্ড। বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা সুপারশপে কেনাকাটায় বৈদেশিক মুদ্রার খরচ করেন সবচেয়ে বেশি। লেনদেনের অন্যান্য ধরনের মধ্যে আছে ওষুধ ও কাপড় কেনাকাটা। এর পরের অবস্থানে আছে যাতায়াত ব্যয়। মূলত উড়োজাহাজ, ট্রেন ও বাসে ভ্রমণ কিংবা উবারের মতো সেবা ব্যবহারের বিপরীতে এই খরচ হয়ে থাকে।
তবে বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অর্থ ব্যয়ের আরও কিছু খাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নগদ বৈদেশিক মুদ্রার উত্তোলন, ব্যবসায়িক বা পেশাগত কাজে ব্যয় ও সরকারি সেবা গ্রহণ ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে বিনিময় হারে সুবিধা পাওয়ায় অনেকে দেশ থেকে নগদ ৈবদেশিক মুদ্রার না নিয়ে বিদেশের এটিএম বুথ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার উত্তোলন করে খরচ করছেন। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার-সংকটের ফলে বাড়তি দরে ৈবদেশিক মুদ্রার কেনার পরিবর্তে এটা তুলনামূলক সাশ্রয়ী।