ইসলামে সব ধরনের প্রাণীর প্রতি সদাচারের নির্দেশনা রয়েছে। প্রাণীদের নানা সেবার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে এবং তা থেকে তোমরা আহার করে থাকো। তোমরা যখন তাদের সন্ধ্যাবেলা চারণভূমি থেকে গৃহে নিয়ে আসো এবং সকালবেলা তাদের চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করো। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেখানে তোমরা অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া পৌঁছা সম্ভব নয়।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫-৭)
প্রাণীদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। শুধু মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে বিষয়টি মোটেও এমন নয়; বরং পশু-পাখি ও জীব-জন্তুসহ সব প্রাণীর প্রতি সদাচার করা উচিত। সাহল ইবনুল হানজালিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসুল (সা.) এমন একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন; অনাহারে উটটির পেট পিঠের সঙ্গে লেগেছিল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা এসব বাকশক্তিহীন পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।
সুস্থ সবল পশুর পিঠে আরোহণ করবে এবং এদের উত্তমরূপে আহার করাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)
হাদিসে পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ক্ষমা লাভের কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এক ব্যক্তি হাঁটছিল। পথিমধ্যে সে পিপাসার্ত হয়ে একটি কূপে নামে।
পানি পান করে সেখান থেকে বের হয়। এমন সময় সে দেখে, একটি কুকুর পিপাসায় অতিষ্ঠ হয়ে হাঁপাচ্ছে এবং মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে ভাবছিল, একটু আগে আমার যে অবস্থা ছিল এরও তেমনি হয়েছে। অতঃপর লোকটি কূপে নেমে মোজা পানি দিয়ে ভর্তি করে এবং তা মুখ দিয়ে আঁকড়ে ধরে ওপরে ওঠে আসে। এরপর পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করায়।
মহান আল্লাহ তার এই কাজ কবুল করেন এবং তার গুনাহ ক্ষমা করেন। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, চতুষ্পদ জন্তুর উপকারের জন্য কি আমরা প্রতিদান পাব? তিনি বলেন, ‘সব প্রাণীর উপকার করলে প্রতিদান রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)
আরেক হাদিসে ব্যভিচারী নারীর ক্ষমা লাভের কথাও এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তখন প্রচণ্ড গরমের দিন ছিল। এমন সময় একটি কূপের আশপাশে এক ব্যভিচারী নারী একটি কুকুরকে ঘুরতে দেখে। কুকুরটি পিপাসায় কাতর হয়ে হাঁপাচ্ছিল। অতঃপর সেই নারী (মোজা দিয়ে কূপ থেকে পানি তুলে) কুকুরকে পানি পান করায়। অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল স্থানে ভ্রমণ করবে তখন উটকেও এর অংশ দাও। অর্থাৎ তাকে সেই স্থানে কিছুক্ষণ চরতে দাও। আর শুষ্ক স্থানে সফর করলে দ্রুত চলো এবং এর শক্তি শেষ হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাও। তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোনো স্থানে অবতরণ করলে সাধারণ রাস্তা পরিহার কোরো। কারণ রাতে তা জীব-জন্তুর চলার পথ এবং পোকামাকড়ের আশ্রয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৫)
যেকোনো প্রাণী বেঁধে রেখে খাবার না দেওয়া গুরুতর পাপ। এক নারী এমন কাজ করে জাহান্নামি হয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক নারীকে বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালকে বেঁধে রাখলে তা মারা যায়। ফলে বিড়ালের কারণে সেই নারী জাহান্নামে প্রবেশ করে। সে বিড়ালকে বেঁধে রেখে কোনো খাবার ও পানীয় দিত না। আবার জমিনের কীট-পতঙ্গ খাওয়ার জন্য বিড়ালকে ছেড়েও দেয়নি।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮২)