কুড়িগ্রামে নিখোঁজ দুই বোনের ভিডিওবার্তা: ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০২:৫৪ অপরাহ্ণ   |   ৩৭ বার পঠিত
কুড়িগ্রামে নিখোঁজ দুই বোনের ভিডিওবার্তা: ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা থেকে নিখোঁজ হওয়া সনাতন ধর্মাবলম্বী দুই বোন অজ্ঞাতস্থান থেকে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিডিওটি কোথা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
 

নিখোঁজ দুই বোন হলেন—স্নিগ্ধা রাণী (২৪) ও পূর্ণিমা রাণী (১৮)। তারা রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শৈলেন্দ্রনাথ বর্মণের মেয়ে। স্নিগ্ধা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পূর্ণিমা একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের পিতা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
 

ভিডিওতে দেখা যায়, দু’জনই বোরকা পরে পাশাপাশি বসে আছেন। মুখ খোলা থাকলেও বেশিরভাগ সময় কথা বলেছেন বড় বোন স্নিগ্ধা। ভিডিওর শুরুতে তিনি সালাম দিয়ে বলেন,“আমি স্নিগ্ধা রাণী। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ।”

পাশে বসে থাকা ছোট বোন পূর্ণিমা পরিচয় দিয়ে বলেন, “আমি পূর্ণিমা রাণী। আমি ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।”

 

স্নিগ্ধা আরও জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর তারা স্বেচ্ছায় নিজ জিম্মায় বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তখন তারা ধর্মান্তরিত হওয়ার অ্যাফিডেভিটও সম্পন্ন করেছেন বলে দাবি করেন। ভিডিওতে কাগজ দেখিয়েও তা প্রমাণের চেষ্টা করেন তারা।
 

নিজেদের অবস্থান নিয়ে স্নিগ্ধা বলেন,
“আমরা বর্তমানে নিরাপদে আছি। স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করছি। মোবাইল নম্বর বন্ধ রাখা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য।”

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাদের ইসলাম গ্রহণের কারণে প্রতিবেশী, বন্ধু ও সহপাঠীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্নিগ্ধা বলেন, “আমরা সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে এবং নিজ ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমাদের কারণে অন্য কাউকে হয়রানি করা ঠিক নয়। আমরা চাই, প্রশাসন এই হয়রানি বন্ধে সহযোগিতা করুক।”
 

বার্তার শেষ দিকে পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন,
“আমরা সুস্থ আছি, চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তবে আমাদের ইসলাম গ্রহণের কারণে কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়।”

 

ভিডিও বার্তার পুরো সময় পূর্ণিমা নীরব ছিলেন। কেবল নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তাকে মলিন মুখে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওটি কে ধারণ করেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কথোপকথনে তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।
 

এদিকে তাদের বাবা শৈলেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেছেন,
“ভিডিওটি আমি দেখেছি। মনে হয়েছে মেয়েদের আগে থেকে শিখিয়ে বলানো হয়েছে। ছোট মেয়েটার মুখ খুবই বিমর্ষ ছিল, মনে হচ্ছিল কাঁদছে।”

 

তিনি আরও বলেন,
“সেদিন বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর শুধু আমার ছেলেকে ফোন দিয়ে ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলেছিল। এরপর কান্না করতে করতে ফোন কেটে দেয়। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। কে নিয়ে গেছে, কোথায় আছে—কিছুই জানতে পারছি না।”

 

প্রতিবেশী বা বন্ধুবান্ধবদের হয়রানি করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তার দাবি, “এই কথাগুলোও মেয়েদের দিয়ে বলানো হয়েছে, যাতে আমরা আর খোঁজখবর না করি।”