অনলাইন ডেস্ক:
শ্রাবণমেঘের মতো টেস্ট ক্রিকেটও মুহূর্তে মুহূর্তে রূপ বদলায়—ঢাকা টেস্টে সেই নাটকীয়তার সবটুকুই দেখা গেল। শনিবার সন্ধ্যায় যারা ভেবেছিলেন রোববার সকালে বাংলাদেশ দ্রুতই ম্যাচ শেষ করবে, তাদের চমকে দিয়ে আয়ারল্যান্ড প্রায় দুই সেশন ধরে লড়াই করল।
প্রথম সেশনে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পেয়েও কার্টলি ক্যাম্ফার ও গ্যাভিন হয়াদের দৃঢ় প্রতিরোধ ভাঙতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তরা। যেন সফরকারীদের অঙ্গীকার ছিল—‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী।’ শেষ পর্যন্ত ১১৩.৩ ওভার ধরে লড়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমানোরই চেষ্টা চলে। শান্ত ম্যাচশেষে বললেন, ‘এটাই তো টেস্ট ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য।’
এর আগেও ভালো ক্রিকেট খেলেছিল আয়ারল্যান্ড। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা তিন টেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সিলেটের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ইনিংস ব্যবধানে হারলেও ঢাকায় তারা সম্মানজনক লড়াই করেছে। ৫০৯ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করে দলটি সংগ্রহ করে ২৯১ রান।
নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শুরু থেকেই ধরে খেলার পথ বেছে নেয় তারা। রান রেট (২.৫৬) দেখলেই বোঝা যায় কতটা স্লো ব্যাটিং করেছে আইরিশরা। তবুও ২১৭ রানে হেরে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো ইউরোপের দলটি। প্রতিপক্ষের লড়াকু মানসিকতাকে সাধুবাদ জানিয়ে শান্ত বলেন, ‘এখন আর ছোট-বড় দল বলে কিছু নেই। ওরা দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। পঞ্চম দিনের উইকেটে যেভাবে আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছে, তার কৃতিত্ব অবশ্যই তাদের প্রাপ্য। আমাদের বোলাররাও ধৈর্য ধরে বল করেছে, এটাও প্রশংসার দাবি রাখে।’
মিরপুরের উইকেট নিয়ে আগে অনেক সমালোচনা থাকলেও এবার টনি হেমিংয়ের তত্ত্বাবধানে স্পোর্টিং উইকেট তৈরির ফলে ম্যাচটি হয়েছে উপভোগ্য। শান্তর ভাষায়, ‘মিরপুরের উইকেট সাধারণত যেমন থাকে, তার চেয়ে অনেক ভালো ছিল। বিশেষ করে সমতল ও ট্রু বাউন্স ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। প্রতিটি উইকেট আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। ক্যাম্ফার যেভাবে এত বল খেলে ব্যাট করেছে, বুঝতে হবে তারা কতটা দৃঢ় ছিল।’
সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য এসেছে অনেক অর্জন নিয়ে। ব্যাটসম্যানরা করেছেন চারটি সেঞ্চুরি ও আটটি হাফ সেঞ্চুরি।
সিলেটে মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্যারিয়ারসেরা ১৭১ রান
ঢাকা টেস্টে তার ৬০ রান
সিলেটে শান্তর ১০০
মিরপুরে মুশফিকুর রহিমের ১০৬ ও লিটন দাসের ১২৮
মুমিনুল হকের তিন ইনিংসে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি (৬৩ ও ৮৭ মিরপুরে)
ওপরের ব্যাটারদের এমন ধারাবাহিকতা অনেক দিন পর দেখা গেল।
নিজেদের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে আমরা আলোচনা করেছি কতগুলো ১০০ করতে পারি। চাই যেন ১০০-তে থেমে না যাই—১৫০, ২০০–তে নিয়ে যেতে হবে। ইতিবাচক হলো চারটি সেঞ্চুরি হয়েছে, তবে নেতিবাচক হলো এগুলোকে বড় করতে পারিনি। দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হলে চমৎকার হতো। ৫০-গুলোও ১০০তে রূপ দেওয়া উচিত ছিল। আশা করি ভবিষ্যতে সুযোগ কাজে লাগাবে সবাই।’
অধিনায়ক আরও জানান, ব্যক্তিগত ইনিংস বড় করার অনুশীলন হতে হবে জাতীয় লিগ থেকেই। তিনি চান জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সুযোগ পেলেই জাতীয় লিগে খেলুন।
সিরিজটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে আরও কয়েকটি মাইলফলকঃ
মুশফিকুর রহিম টেস্টে শততম ম্যাচ খেলেছেন (বিশ্বের ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে)
শততম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা
লিটন দাস তিন হাজার টেস্ট রান পূর্ণ
মাহমুদুল হাসান জয়ের এক হাজার রান স্পর্শ
তাইজুল ইসলাম হয়েছেন বাংলাদেশের রেকর্ড ২৫০ উইকেটের মালিক, সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন সিরিজসেরা
আইরিশ ব্যাটার ক্যাম্ফার মিরপুরে সর্বোচ্চ ২৫৯ বল খেলে ৭১* রানের অনন্য রেকর্ড গড়েছেন
সব মিলিয়ে, অর্জনময় সিরিজে বাংলাদেশ দেখাল পরিপক্বতা, আর শান্তরা উপহার দিলেন রেকর্ডবহুল সিরিজ জয়।