এখনো স্বস্তি ফেরেনি নিত্যপণ্যের বাজারে 

প্রকাশকালঃ ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ ৩৮৬ বার পঠিত
এখনো স্বস্তি ফেরেনি নিত্যপণ্যের বাজারে 

এখনো স্বস্তি ফেরেনি নিত্যপণ্যের বাজারে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ ভোক্তা। গত আগস্টের শুরুতে সরকার বদলের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন ও কাঁচাবাজারগুলোতে চাঁদাবাজি অনেকটা কমে আসে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে ভেবেছিল ভোক্তারা।

 

কিন্তু পণ্যের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। চাল, মাছ, মাংস, ডিম, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না। জুলাই থেকে অক্টোবরে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম ৯ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, ভোক্তারা হতাশ

 

খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে, আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যে খুব বেশি কার্যকর নয়, তা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্তর বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বাজারে দ্রুত স্বস্তি ফেরানোর আহ্বান ভোক্তাদের।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে পোলট্রি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বাজারে মুরগি, ডিম ও সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি বেড়েছে। এতে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহের ঘাটতি না থাকলেও বাজারে নজরদারি কম থাকায় ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।

 

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত জুলাই ও অক্টোবর বাজারদর ও রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও মহাখালী কাঁচাবাজারের দর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত জুলাইয়ের তুলনায় অক্টোবরের খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১১ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


 
প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ৯ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় উঠেছে। বাজারে মাছের সংকট না থাকলেও ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে মাঝারি রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন সব ধরনের সবজির দাম চড়া।

 

গত জুলাই মাসের তুলনায় অক্টোবরে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দামও ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে ঢেরশ, করলা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল ও বরবটির মতো সবজিও এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না।

 

দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার  বলেন, ‘দেশে ডিমের চাহিদা আছে দৈনিক চার কোটি পিস। উৎপাদন সক্ষমতা ছিল প্রায় সাড়ে চার কোটি। কিন্তু বন্যার কারণে বিভিন্ন জেলার খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ লাখ ডিম কম উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়ে গেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘কম মূল্যে মুরগি ও ডিম পেতে হলে পোল্ট্রি খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার দাম কমাতে হবে। কারণ আমাদের ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ২৯ পয়সা, কিন্তু ভারতে ডিমের উৎপাদন খরচ মাত্র পাঁচ টাকা। এখানে উৎপাদন খরচকেই বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এটা সমাধান করতে হলে বড় বড় সিন্ডিকেট ও করপোরেট গ্রুপগুলোকে ধরতে হবে।’

 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সবার জন্য নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংসের জোগান নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনে কিভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যায় সে চেষ্টাই করতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ডিম ও মুরগি সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোক্তাদের মাঝে একটা ভরসা ছিল যে তারা হয়তো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

 

প্রায় দুই মাস হয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের, কিন্তু বাজারে কোনো পরিবর্তন দেখছি না। বরং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দিকেই আছে। তাই ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বাজার তদারকিতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

      

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান  বলেন, ‘দেশীয় পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া খাদ্যের ঊর্ধ্বগতি নামিয়ে আনা যাবে না। গত কয়েক বছর ধরে আমাদের খাদ্যশস্যের উৎপাদন খুব বেশি বাড়েনি। যে পণ্যের ঘাটতি থাকবে, সেই পণ্য দ্রুত আমদানি বাড়িয়ে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। সরকার যে খাদ্যশস্যের মজুদ রাখে সেই মজুদ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে। যখনই বাজারে ধান-চালের দাম বেড়ে যাবে, তখনই প্রয়োজন অনুযায়ী ছাড়তে হবে।’