নবীজি (সা.)-এর সতর্কতা চান্দ্র মাসের হিসাব গণনায়

প্রকাশকালঃ ২০ জুলাই ২০২৩ ১২:২০ অপরাহ্ণ ২৫১ বার পঠিত
নবীজি (সা.)-এর সতর্কতা চান্দ্র মাসের হিসাব গণনায়

হিজরি বর্ষ হলো ইসলামের দাপ্তরিক বর্ষ। ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি বর্ষ তথা চান্দ্র মাস অনুযায়ী পালন করতে হয়। যেমন—রমজানের রোজা, আইয়ামে বিজের রোজা, হজ, আশুরা, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর প্রভৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিধি-নিষেধ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া জাকাতের এক বছর গণনা, সন্তানের বয়স গণনা এবং পূর্ণ দুই বছর সন্তানকে মায়ের দুধ পান করানোর হিসাব—সবই হিজরি বর্ষ তথা চান্দ্র মাস অনুযায়ী হয়ে থাকে।

কোরবানির পশুর বয়সও চান্দ্র মাস অনুযায়ী বিবেচিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘লোকে তোমাকে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বলো, এটি মানুষ এবং হজের জন্য সময় নির্দেশক। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৯) অর্থাৎ চাঁদের এই পরিবর্তন দেখে দিন-তারিখ ঠিক করা হয় এবং তারই আলোকে ইবাদত পালনের সময় নির্ধারিত হয়।

ইসলামের অনেক বিধি-বিধান চান্দ্র মাস ও হিজরি বর্ষের সঙ্গে জড়িত। ঈদ, আশুরা, শবেবরাত, শবেকদরসহ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উত্সব সবই এর ওপর নির্ভরশীল। মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় জীবনে হিজরি বর্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। চান্দ্র মাসের হিসাব গণনায় নবী (সা.) অত্যন্ত সতর্ক থাকতেন।


চান্দ্র মাসের হিসাব গণনায় নবীজি (সা.)-এর সতর্কতা : নবী (সা.) খুব সতর্কতার সঙ্গে চাঁদের হিসাব রাখতেন এবং অন্যদের এ ব্যাপারে উত্সাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩২৭)

সবার জন্য বোধগম্য : সূর্য ও চন্দ্র মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি ও অন্যতম নিদর্শন। বিশ্বব্যবস্থাপনা সূর্য ও চন্দ্রের গতি ও কিরণ-রশ্মির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত রয়েছে। সূর্য ও চন্দ্রের গতি ও নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণব্যবস্থা একটি বিশেষ হিসাব ও পরিমাপ অনুযায়ী চলে। এর মাধ্যমেই রাত-দিনের পার্থক্য, ঋতুর পরিবর্তন এবং মাস-বছর নির্ধারিত হয়। সূর্যের গতি থেকে সৌরবর্ষ এবং চন্দ্রের গতি থেকে চন্দ্রবর্ষ হিসাব করা হয়। আকাশের চাঁদ দেখে চান্দ্র মাসের হিসাব সহজেই আয়ত্ত করা যায়। 

শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রামবাসী-মরুবাসী-উপজাতি-নির্বিশেষে সবার জন্যই চান্দ্র মাসের হিসাব সহজতর। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং এর মানজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫)


কোরআন-সুন্নাহে হিজরি বর্ষের আলোচনা : হিজরি বর্ষের মাসগুলো কোরআন-সুন্নাহে আলোচিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সত্পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫) মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘হজ হয় সুবিদিত মাসগুলোতে...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

সুবিদিত মাসসমূহের ব্যাখ্যায় ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘সুবিদিত মাসসমূহ হলো শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের প্রথম দশক।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪৮৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)

চারটি নিষিদ্ধ মাসের ব্যাখ্যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘চারটি নিষিদ্ধ মাসের তিন মাস ধারাবাহিক—জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর রজব, যা জামাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যের মাস। (বুখারি, হাদিস: ৩০২৫; মুসলিম, হাদিস: ৪৪৭৭)


সফর মাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘সফর মাসে অকল্যাণ নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৪২৫; মুসলিম, হাদিস: ৫৯২৬)

রবিউল আওয়াল মাসের বর্ণনায় ইবনে শিহাব (রহ.) বলেন, উরওয়া ইবন জুবায়ের (রা.) হিজরত প্রসঙ্গে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সবাইকে নিয়ে ডানদিকে মোড় নিয়ে বনু আমর ইবনে আউফ গেত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আওয়াল মাসের সোমবার। (বুখারি, হাদিস: ৩৬৯৪)

যথাসময়ে ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের স্বার্থে চাঁদ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চান্দ্র মাস ও হিজরি বর্ষের হিসাব রাখা সবার জন্য জরুরি। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।