আবারো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তার রাজনৈতিক বিজয় হলেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি স্বস্তি পাচ্ছেন না। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই দেশটির মুদ্রা লিরার রেকর্ড দরপতন হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, লিরার এই রেকর্ড দরপতন এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এরদোগানের শাসনের তৃতীয় দশকে দেশটিতে অর্থনৈতিক বিপত্তি ঘটতে পারে।
এখন ১ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ২০ দশমিক ১৫ লিরা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক মর্গ্যান স্ট্যানলির পূর্বাভাস, লিরার মান আরও পড়তে পারে; খুব দ্রুতই ১ ডলারের মান আরও বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৬ ও এমনকি ২৮ লিরা।
আঙ্কারায় রোববার রাতে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের ব্যালকনিতে এরদোগানের আগ্রাসী মনোভাব দেখা গেছে। তিনি বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং অগতানুগতিক অর্থনৈতিক নীতি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর আবার এক দেশাত্মবোধক কবিতাও আবৃত্তি করেছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার দর কমছে। ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে সরকার নিজেই দাম বেঁধে দিয়েছে। এই পথেই এরদোগান এত দিন ধরে চলেছেন। বিশ্লেষকরা বলেন, এরদোগানের নীতির কারণেই তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট বেড়েছে।
এরদোগান একধরনের অগতানুগতিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করেন। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে যখন সব দেশ সুদের হার বাড়ানোর পথে হেঁটেছে, এরদোগান তখন উল্টো নীতি নিয়েছেন। গত বছর তুরস্কের মূল্যস্ফীতির হার ৮০ শতাংশে উঠলেও তার নির্দেশে নীতি সুদহার কমিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে লিরার দাম ধরে রাখতে পারেননি এরদোগান। মার্কিন ডলারের তুলনায় তুরস্কের এই মুদ্রার দাম কমেছে। গত প্রায় ছয় বছরের হিসাব ধরলে লিরার দর ডলারের বিপরীতে আগের চেয়ে ছয় গুণ কমেছে।
তুরস্কের মানুষ অনেক বেশি চিন্তিত মূল্যস্ফীতি নিয়ে। গত বছরের অক্টোবরে সে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮০ শতাংশ। গত এপ্রিল মাসে অবশ্য তা ৪৩ শতাংশে নেমে আসে। দেশটিতে খাদ্য, বাড়িভাড়া ও অন্যান্য পণ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে।
এরদোগান বিশ্বাস করেন, সুদের হার কমালে মূল্যস্ফীতি কমে। সেই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি গত বছর কয়েকবার নীতি সুদহার কমিয়েছেন; কিন্তু সারা বিশ্বে তার উল্টোটা দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বাড়লে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র দেড় বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নীতি সুদহার বাড়িয়েই যাচ্ছে, এমনকি তাতে সেসব দেশে মন্দার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
সংকট থাকার পরও ভিন্ন নীতিতে সমাধানের পথে হাঁটার কথা জানিয়েছেন এরদোগান। বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, এরদোগানের জয়ে এক রাতের জন্য হলেও তুরস্কের সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক সংকটের কথা ভুলে গেছে। এমনকি তার সমর্থকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা তার (এরদোগান) অর্থনৈতিক নীতিতে খুশি। পরের পাঁচ বছরে তিনি আরও ভালো করবেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেও স্বীকার করেন, মূল্যস্ফীতিই এখন তুরস্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তিনি এ সমস্যার সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কিনা।