ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে বেসরকারি খরচ

প্রকাশকালঃ ২৩ আগu ২০২৩ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ ১৫৭ বার পঠিত
ডেঙ্গু  চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে বেসরকারি খরচ

লতি বছর (জানুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত) বরিশাল বিভাগে ১১ হাজার ৬৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। সরকারি হাসপাতাল হলেও রোগীরা যে টাকা ব্যয় করেছে তা বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে কম নয়। পাঁচ রোগীর সঙ্গে কথা বলে কালের কণ্ঠ এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

ভোলার দিনমজুর শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রুবিনা আক্তার (২৮) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তাঁকে বাড়ির পাশে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ১৫ আগস্ট বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে আসার পর প্রথম চার দিনে ওষুধ, স্যালাইন, টেস্ট করাতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে তিনটি স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ পেয়েছি। অন্য সব কিছু বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন পর্যন্ত তাঁর ২০ হাজারের বেশি টাকা চলে গেছে।’


বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাইয়ের আবুল হোসেনের স্ত্রী কল্পনা আক্তার (৩১) সাত দিন ধরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। আবুল বলেন, ‘সাত দিনে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

প্রতিদিন দুটি করে ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে, দাম ৭০০ টাকা করে।’ এ ছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশার সোহেল হাওলাদারের স্ত্রী কহিনুর বেগম এবং পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার স্লুইসগেট এলাকার জেলে মাছুম মাঝির স্ত্রী আমেনা বেগমও অতিরিক্ত খরচের কথা জানিয়েছেন।


বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় সম্পর্কে জানতে বরিশালের রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল ও আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে খোঁজ নেন এই প্রতিবেদক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ওখানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নেই। এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালকের বুলেটিনে।

সেখানেও বেসরকারি হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা, চিকিৎসক ও সার্ভিস চার্জ দিতে হয়, যা সরকারি হাসপাতালে দিতে হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালে স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। রোগী ভর্তির পরদিন থেকে স্যালাইন পান। তবে হাসপাতালে সব ওষুধের সরবরাহ নেই। যা আছে, সেগুলো রোগীদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।’


ডেঙ্গু প্রকট

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে দেখা যায়, চলতি বছর ১১ হাজার ৬৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৮ জন। ৩০ রোগী মারা গেছে। ৮৫৬ রোগী চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল জেলায় এক হাজার ৫৯৯, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই হাজার ৯৪০, পটুয়াখালীতে এক হাজার ৩৬৪, পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক হাজার ৯২, ভোলায় এক হাজার ৩১১, পিরোজপুরে এক হাজার ৮৭৯, বরগুনায় এক হাজার ১৪২ এবং ঝালকাঠিতে ৩১৮ জন। আর মৃত ৩০ জনের মধ্যে বরিশালে ২১, ভোলায় চার, বরগুনায় তিন ও পিরোজপুরের দুজন রয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঢাকাসহ বড় শহরে ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। জুলাই থেকে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসছে। চলতি মাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার রোধে এখন ব্যক্তি পর্যায়ে সুরক্ষা, সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।’