৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের নকশায় ভুল

প্রকাশকালঃ ১৮ জুলাই ২০২৩ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ ১৭৩ বার পঠিত
৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের নকশায় ভুল

ব্যয় ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কাজও প্রায় শেষ। আগামী বৃহস্পতিবার উদ্বোধন। শেষ মুহূর্তে জানা যাচ্ছে, নকশায় একটি ভুল হয়েছে। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্টেশনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সমতল (র‌্যাম্প) সিঁড়ি তৈরি করা হয়নি। এটি আইনের লঙ্ঘন।

২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের ৩৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পার্ক, স্টেশন, বন্দর, টার্মিনাল ও সড়ক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরোহণ, চলাচল ও ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।’ ৪০ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই আইনের লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি যদি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হয়, তাহলে প্রত্যেক কর্মকর্তা বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবে।’

আলোচিত প্রকল্পের নাম আখাউড়া- কুমিল্লার লাকসাম ৭২ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ নির্মাণ ও রেলওয়ে স্টেশন উন্নয়ন। এই কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এরই মধ্যে আখাউড়া স্টেশন ভবনের আধুনিকায়ন, নতুন একাধিক প্ল্যাটফরম নির্মাণ, রেল ট্র্যাক স্থাপন, আধুনিক সংকেত (সিগন্যাল) ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। সারা দেশে নতুন তৈরি রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সমতল সিঁড়ি থাকলেও এখানে সেটি করা হয়নি।


সাধারণ যে সিঁড়ি করা হয়েছে, সেটিও অনেক উচ্চতার ও বেশ দৈর্ঘ্যের। প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি বয়স্ক ও শিশু এবং বেশি মালপত্র নিয়ে ভ্রমণ করবে এমন যাত্রীরা বিপাকে পড়বে। এই স্টেশন দিয়ে অনেকে ভারতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করে থাকে। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে ১৭টি নতুন লাইন বসানো হচ্ছে। মোট প্ল্যাটফরম হচ্ছে তিনটি।

এ জন্য প্রায় ১৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৩০ ফুট উচ্চতার সাধারণ সিঁড়ি করা হচ্ছে। তবে নেই কোনো সমতল সিঁড়ি। কাজের সুবিধার্থে পুরনো প্ল্যাটফরম দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখায় নতুন প্ল্যাটফরমে আসছে ট্রেন। যে কারণে বিশাল সিঁড়ি বেয়ে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে হচ্ছে।


গত ১৩ জুলাই অসুস্থতা নিয়ে চট্টলা ট্রেনে চড়তে স্টেশনে ঢুকছিলেন নরসিংদীর মো. আমীর হোসেন। স্বজনদের কাঁধে ভর করে চলতে থাকা অসুস্থ এ মানুষটি বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘এত টাকা খরচ করে এমন স্টেশন করে কী লাভ? সামান্য কিছু টাকার জন্য প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা বঞ্চিত হলো, নাকি এখানে কোনো ভুল হয়েছে?’


শারীরিক প্রতিবন্ধী যাত্রী মো. নায়েব আলী বলেন, ‘সমতল সিঁড়ি হলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হতো। এখন যে ধরনের সিঁড়ি করা হচ্ছে, সেটি দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের চলা কোনোভাবে সম্ভব নয়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ড্রিম ফর ডিস-এবিলিটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. হেদায়েতুল আজিজ মুন্না বলেন, ‘আখাউড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশনে প্রতিবন্ধীদের চলার মতো সুবিধা না থাকাটা দুঃখজনক।’


আখাউড়া পৌরসভার কাউন্সিলর মো. এনাম খাদেম বলেন, ‘বিষয়টি অনুধাবন করে গত শুক্রবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে সমতল সিঁড়ি করার আবেদন করেছি। আশা করছি, মন্ত্রী পদক্ষেপ নেবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেন, ‘নকশায় সমতল সিঁড়ির কথা বলা নেই। আমার মনে হয়, এটি একটি ভুল। সাধারণ সিঁড়ি হয়ে যাওয়ায় সমতল সিঁড়ির জন্য এখন জায়গা করাও মুশকিল হবে।’

আখাউড়া-লাকসাম ডাবল রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক সুবক্ত গীন বলেন, ‘পরিকল্পনার মধ্যে সমতল সিঁড়ি নেই। যে কারণে সেটি করা হয়নি।’