রাত তখন গভীর। শুটিংয়ে ক্লান্ত সবাই। এর মধ্যেই শেষ দৃশ্যের শুটিং চলছে। পরিচালক একসময় বললেন, ‘ওকে, কাট। শুটিং প্যাকআপ।’ রাত চারটার সময় শিল্পী, কলাকুশলীরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। এবার বিশ্রাম নেওয়ার পালা। এর মধ্যেই আটকে রইলেন অভিনেতা খায়রুল বাসার।
শুটিংয়ের প্রয়োজনে বাসারের হাতে লাগানো হয়েছিল হাতকড়া। সেই হাতকড়ার সঙ্গে ছিল নকল চাবি। সেটা শুটিং ইউনিটের কেউই জানতেন না। এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। অনেক চেষ্টা করেও এই হ্যান্ডকাপ খোলা যাচ্ছিল না। তারপরের ঘটনা যেন সিনেমার ক্লাইম্যাক্সের মতো। এই ঘটনা ঘটে ‘পুনর্জন্ম’ সিকুয়েলের শেষ পর্বে। এটি চ্যানেল আইতে প্রচারিত হয়।
সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে মনজুকে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাসার। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানা যায়, সে অপরাধী। তারপরের দৃশ্য ছিল হাতকড়া পরানোর। হাতকড়ার সঙ্গে ছিল চাবি।
শুটিংয়ে বেশির ভাগ সময় হাতকড়া এমনভাবে লাগানো হয় যেন সহজেই সেটা খোলা যায়। কিন্তু সোমবার রাতের ঘটনাকে অঘটনই বলা চলে। খায়রুল বাসার বলেন, ‘হাতকড়াসহ এসব জিনিসের দায়িত্বে থাকেন শুটিংয়ের আর্ট ডিরেক্টর। কিন্তু তিনিও জানতেন না যে চাবিটা ছিল নকল। পরে যা হওয়ার, তা–ই হলো। এটা কোনোভাবেই খুলছিল না। ভেতরে সেফটিপিন, লোহাসহ অনেক কিছু দিয়ে খোলার চেষ্টা করেছি। কোনো লাভ হয়নি। হাত বের করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু হাত কোনোভাবেই বের হচ্ছিল না। সে কী ভোগান্তি!’
ভোর চারটায় শুটিংসেটে হাতকড়া নিয়ে তুলকালাম অবস্থা। ততক্ষণে সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কীভাবে হাতকড়া থেকে উদ্ধার করা যায় অভিনেতাকে,সেটা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। প্রডাকশন বয় থেকে শুরু করে সবাই।
দুই ঘণ্টা চেষ্টা করেও সমাধান হয়নি। রীতিমতো হাতে ব্যথা হয়ে যায় অভিনেতার। বাসার বলেন, ‘শুটিংয়ে এমন ঘটনার মুখোমুখি কখনোই হইনি। হাতকড়া কীভাবে খোলা যায়, সেটা নিয়ে ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও দেখলাম। সেভাবে এগিয়েও কোনো লাভ হলো না।’
ভোর ছয়টার সময় মাথায় আরেক বুদ্ধি এল। শুটিংয়ের কেউ কেউ বুদ্ধি দিলেন, করাত দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। রাজিও হলেন অনেকে। কিন্তু এভাবে কাটতেও দুই ঘণ্টা লেগে যাবে।
বাসার বলেন, ‘সব দিক থেকে ব্যর্থ হয়ে আমি মন খারাপ করে বসেই ছিলাম। ভাবছিলাম কখন, কীভাবে বাসায় ফিরব। হঠাৎ মাথায় এল, হাত টেনে বের করি। কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। হাত অর্ধেক বের হয়ে বাকিটুকু বের করা সম্ভব মনে হচ্ছিল না। ওদের বলি, তেল জোগাড় করো বা পেট্রোলিয়াম–জাতীয় কিছু নিয়ে এসো। হাত ভেঙে গেলেও বের করব। তারপর চেষ্টা করতে করতে একপর্যায়ে কষ্ট হলেও হাত মুক্ত হয়।’
‘পুনর্জন্ম’ অন্তিম এই পর্বে মনজুর প্রেমিকা নিখোঁজ। তাকে খুঁজতে শহরে এসেছে এই তরুণ। এরপর নানা ঘটনার মধ্যে জড়িয়ে যায় খায়রুল বাসারের চরিত্র। নাটকে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী। এটি পরিচালনা করেছেন ভিকি জাহেদ।