ঝালকাঠিতে সমিতির নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ
প্রকাশকালঃ
২৮ জুলাই ২০২৪ ০১:২৯ অপরাহ্ণ ৮৬ বার পঠিত
ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়ন। এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম পেয়ারা আবাদ ও কৃষি। ইউনিয়নের এসব খেটে খাওয়া মানুষের সরলতার সুযোগ নিতে গড়ে উঠেছে শিকড় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি। এদের উদ্দেশ্য সহজে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে পরিশ্রমের টাকা হাতিয়ে নেওয়া। বেশি লাভের আশায় এখানে জমানো টাকা না পেয়ে দিশেহারা সদস্যরা। তারা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে।
উপজেলার ডুমরিয়া গ্রামের এই সমিতির নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। অর্থ আত্মসাৎ করায় সমিতির সদস্যরা সভাপতি সুমন মজুমদার ও সম্পাদক গ্রিন বিশ্বাসকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে সঞ্চয়ের টাকা ফেরতের দাবি জানায়। গত ২৬ জুলাই খবর পেয়ে ঝালকাঠি সদর থানাপুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সভাপতি ও সম্পাদককে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে রক্ষা করে থানায় নিয়ে আসেন।
সমিতির সূত্র জানায়, সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সঞ্চয় আছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া আছে। সমিতির শেয়ার হোল্ডারদের নামে প্রায় সাত বিঘা এবং ডুমরিয়া বাজারে ৩ শতাংশ জমির ওপর সমিতি কার্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয়ের টাকায় কেনা। ১ লাখ টাকায় ১ হাজার ৫০০ টাকা লাভ দেওয়ার প্রলোভনে এই টাকা নেওয়া হয়। এলাকাবাসী এবং সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালে ২০ জনের সমন্বয়ে শতাধিক সদস্য নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়। যার বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৫ হাজার বলে সমিতির সভাপতি জানান।
বর্তমান সভাপতি সুমন মজুমদার সে সময় ভীমরুলী বাজারে পুরাতন কাপড় সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর ২০২০ সালে সমিতির সদস্য হন। একপর্যায়ে ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থক হিসেবে কাজ করেন। এরপর চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে সভাপতির পদ নেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পেয়ে যান ডুমরিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। হন বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। শুধু তাই নয়, সমিতির টাকা থেকে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে ৩১ লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। সম্পাদক গ্রিন বিশ্বাস এই টাকা দিতে রাজি হননি। তখন সভাপতির সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সদস্যদের টাকায় কোটি টাকা খরচ করে সুমন গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়িসহ গরুর খামার ও সম্পদ।
গত ২৬ জুলাই সমিতির এজেন্ট পরিচয়ে সভাপতির সামনেই মিনি হালদার জানান, ‘আমার মাধ্যমে পাঁচ জন ২১ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিল। এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল পেলেই আমরা খুশি।’ টাকা না পেয়ে গত ২৬ জুলাই সদস্যরা সমিতির কার্যালয়ে এসে সভাপতি সুমন হালদার ও সাধারণ সম্পাদক গ্রিন বিশ্বাসকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সভাপতি ও সম্পাদককে থানায় নিয়ে আসে। একপর্যায়ে সদস্যরা থানায় এসে ভিড় জমায়।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, শিকড় সমিতির সভাপতি সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনরোষ থেকে বাঁচাতে থানায় আনা হয়েছিল। পরবর্তীকালে আগামী ২ আগস্টের মধ্যে সদস্যদের পাওনা টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে তাদের দুই জনকে পাওনাদারদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
সভাপতি সুমন মজুমদার সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দিতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে একটি লোনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সমিতির রেজিস্ট্রেশন থাকায় সঞ্চয়ের টাকা ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না। সদস্যদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে পর্যায়ক্রমে। গত ২৫ জুন সমিতি কার্যালয়ে এক সভায় আমি উপস্থিত সদস্যদের এ কথা জানিয়েছি।’