বগুড়া ব্যুরো:-
বগুড়ার শিবগঞ্জে নাগরিক ঐক্য ও বিএনপির মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বয়কট করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে জামায়াতের নেতারাও সভা থেকে বের হয়ে যান। শিবগঞ্জ উপজেলা যুবদল সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে ককটেল হামলার প্রতিবাদে এবং হামলার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিএনপি সভাটি বয়কট করেছে। এ সময়, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম ঘোষণা দেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদুতজামানসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা এবং ১২ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। সভার সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
সভায় মীর শাহে আলম বলেন, মাহামুদুর রহমান মান্না একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে দলের পরিবর্তন করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, মান্না ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের তার দলে নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মীর শাহে আলম আরও অভিযোগ করেন, ইউএনও ও থানার ওসি রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করার পেছনে মান্নার হস্তক্ষেপ রয়েছে।
রনির বাড়িতে হামলার জন্য নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের দায়ী করে মীর শাহে আলম বলেন, হামলার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তিনি প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত কোনো ধরনের সহায়তা করবে না এবং প্রশাসনের কোনো সভায় অংশগ্রহণ করবে না। তিনি আরও ঘোষণা করেন, নাগরিক ঐক্যের কোন কর্মসূচি শিবগঞ্জে করার সুযোগ দেওয়া হবে না এবং যেকোনো নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীকে ধরে থানায় সোপর্দ করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রনির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মীর শাহে আলম তার বক্তব্য শেষ করার পর সভায় উপস্থিত সবাইকে নিয়ে সভা বয়কট করে বের হয়ে যান।
এর আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শিবগঞ্জ উপজেলা চত্বরের শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার সময় উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করা হয়। নাগরিক ঐক্য এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছে। এ ঘটনায় নাগরিক ঐক্য শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তবে, এই অভিযোগ এখনও এজাহার হিসেবে রেকর্ড হয়নি।
এই ঘটনার পর, সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে ককটেল হামলা এবং রনিসহ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। বিএনপি এই হামলার জন্য নাগরিক ঐক্যকে দায়ী করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিএনপি এখন নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নাগরিক ঐক্যের জেলা সমন্বয়ক সাইদুর রহমান সাগর বলেন, বিএনপির লোকেরা তাদের দলীয় শহীদুলের ওপর হামলা ও ছুরিকাঘাত করেছে এবং পরে তারা নিজেদের কর্মীর বাড়িতে হামলার ঘটনা সাজিয়েছে। তিনি আরও বলেন, থানায় মামলা দিতে গেলেও পুলিশ এখনও মামলা নেয়নি।
বিএনপি নেতা মীর শাহে আলম বলেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্নার নির্দেশেই যুবদল নেতা রনির বাড়িতে হামলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুলের ওপর হামলা দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে তাদের নিজ দলের লোকেরাই করেছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, তদন্ত চলছে এবং এখনও কোনো পক্ষ মামলা করেনি।