ভারতের চাল কিনছে না ক্রেতারা, শুল্কের কারণে আটকে গেছে পাঁচ লাখ টন চালের চালান
প্রকাশকালঃ
৩০ আগu ২০২৩ ০৪:২৯ অপরাহ্ণ ২১৯ বার পঠিত
শুল্ক আরোপের কারণে ভারত থেকে সেদ্ধ চাল রপ্তানি স্থগিত করেছে দেশটির রপ্তানিকারকেরা। আমদানিকারকেরাও শুল্ক দিয়ে অতিরিক্ত দামে চাল কিনতে চান না, সে কারণে উভয় পক্ষের তৎপরতায় দেশটি থেকে পাঁচ লাখ সেদ্ধ চাল রপ্তানি স্থগিত হয়ে গেছে।
রয়টার্সের বরাতে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, পাঁচ লাখ টন চালের এই চালান মধ্য অক্টোবরের পর ছাড় করা হবে, অর্থাৎ শুল্ক উঠে যাওয়ার পর। কিন্তু ভারত থেকে চাল না গেলে বিশ্বের অনেক দেশেই চালের মজুত কমে যাবে, যেমন বেনিন, ঘানা, কোতে ডি আইভরি, লাইবেরিয়া। তাতে স্বাভাবিকভাবেই এসব দেশে চালের দাম বাড়বে। এমনিতেই এসব দেশে চালের দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, এখন তারা চাল আমদানি করতে না পারলে দাম আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোটের আগে দেশের বাজারে চালের দাম বাড়তে দিতে চায় না কেন্দ্রীয় সরকার। সে কারণে তারা খাদ্য রপ্তানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করছে। সবশেষ গত শুক্রবার তারা সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ভারতের এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিমাংশু আগরওয়াল রয়টার্সকে বলেছেন, ক্রেতারা চাল কেনা স্থগিত করেছেন, কেউই মূলত শুল্ক দিতে চান না।
ভারতের রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বি ভি কৃষ্ণা রাও বলেছেন, পাঁচ লাখ টন চালের চালান স্থগিত হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে ভারতের রপ্তানিকারকেরা ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল টনপ্রতি ৪৫০ থেকে ৪৫৫ ডলারের বিক্রি করেছেন। কিন্তু এরপর দাম ৫২০ থেকে ৫৪০ ডলারে উঠেছে। গত বছরের তুলনায় যা ৪০ শতাংশ বেশি।
শুল্ক আরোপের আগে থেকেই ক্রেতারা চালের দাম নিয়ে একধরনের অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন। কৃষ্ণা রাও জানান, আফ্রিকার ক্রেতারা এত বেশি দামে চাল কিনতে পারবেন না।
অক্টোবরের আগে দাম কমার পরিস্থিতি নেই বলে মনে করেন কৃষ্ণা রাও। রয়টার্সকে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন চাল অক্টোবরে বাজারে আসবে, তখন স্থানীয় বাজারে চালের দাম কমলে চালের রপ্তানি মূল্যও কমবে।
২০২২ সালে ভারত ২২ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২২ লাখ টন চাল রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৭৪ লাখ টন ছিল সেদ্ধ চাল। এদিকে চাল আমদানিনির্ভর দেশগুলো আরও কিছু কারণে বিপাকে পড়েছে। ভারতের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানি চালের দামও বেড়েছে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, আফ্রিকার ক্রেতারা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে চাল কেনা পিছিয়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
ভারতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এশিয়া ও আফ্রিকার নিম্ন আয়ের দেশগুলো শতভাগ ভাঙা চাল নিতে চাইত, যে চাল টনপ্রতি ৩২৫ ডলারে বিক্রি হতো। কিন্তু ভারত গত বছর ভাঙা চাল রপ্তানিও নিষিদ্ধ করেছে।
চালের বৈশ্বিক রপ্তানি বাজারের ৪০ শতাংশ ভারত সরবরাহ করে। কিন্তু জুলাইয়ে বাসমতী ব্যতীত সাদা চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপরই বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। অভ্যন্তরীণ মজুত ধরে রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ২৫ আগস্ট সেদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।
গত ২১ জুলাই অবাসমতী সাদা চাল রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি, তার লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়ানো ও আসন্ন উৎসব মৌসুমের সময় চালের খুচরা দাম নিয়ন্ত্রণ করা। ভারত যত চাল রপ্তানি করে তার প্রায় ২৫ শতাংশ অবাসমতী সাদা চাল। তারও আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল ভারত।