৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বেড়েছে অনুৎপাদনশীল খাতে

প্রকাশকালঃ ২৭ মার্চ ২০২৩ ০২:০৯ অপরাহ্ণ ৩৪৫ বার পঠিত
৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বেড়েছে অনুৎপাদনশীল খাতে

ব্যাংকের ভোক্তা ঋণে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। ভোক্তা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহূত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ভোক্তা ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ৩৫ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি এবং কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে শেষ তিন মাসেই বেড়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ। ক্রেডিট কার্ড ও নিজ স্যালারি অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ব্যাংকে জমানো সঞ্চয় লিয়েন রেখেও ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া ফ্ল্যাট, প্লট, গাড়ি, মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, এসি, কম্পিউটার ও ফার্নিচার ক্রয়েও ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।

সাধারণভাবে ভোক্তা ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হয়। ভোক্তা ঋণ বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে ভোক্তা ঋণ নিয়ন্ত্রণের পক্ষে মত দেন অর্থনীতিবিদরা।  অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভোক্তা ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এতে মানুষের সংসারের খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই অনুপাতে আয় বাড়েনি অনেকের, বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের। ফলে খরচের তালিকা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। আবার অনেকেই তা পারছেন না। যারা পারছেন না তারা ঋণ নিয়ে হলেও বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। রোজার মাসেও পণ্যমূল্য বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এর ফলে খরচ বেড়ে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হবে। যার চাপ পড়বে মূল্যস্ফীতিতেও।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই ভোক্তা ঋণে খানিকটা কড়াকড়ি আরোপ করে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে করোনার কারণে স্থবির অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরিতে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ভোক্তা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণে ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে সব ধরনের অশ্রেণীকৃত ভোক্তা ঋণে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হতো, যা ঐ সময় কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যসব ভোক্তা ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে ভোক্তা খাতে ঋণ বিতরণে বেশ আগ্রহ দেখায় ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে সুদের হার তুলনামূলক কম হওয়ায় সাধারণ মানুষও সংসারের বাড়তি খরচসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই ঋণ নিতে উত্সাহিত হন। তবে চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে ভোক্তা ঋণের সুদহার সীমা বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ভোক্তা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। যা গত বছরের ডিসেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ভোক্তা ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের পুরো সময়ে ভোক্তা ঋণ বেড়েছিল মাত্র ১৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৬ শতাংশ। করোনা মহামারির বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ভোক্তা ঋণের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। শুধু ভোক্তা ঋণের পরিমাণই নয়, এ সময়ে ভোক্তা ঋণের গ্রাহকও বেড়েছে বেশ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভোক্তা ঋণের মোট গ্রাহক ছিল ২৮ লাখ ১০ হাজার ৪৭২ জন। যা গত বছর ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ২২ জন। এ হিসাবে ২০২২ সালে ভোক্তা ঋণের গ্রাহক বেড়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৫৫০ জন।