রাজধানীর মহাখালীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রেললাইন ব্লক করেছে। ফলে ঢাকার সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ঢাকা জেলা রেলওয়ের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার পর শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেলগেইটে অবরোধ করলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া এতে করে ঢাকাগামী ও ঢাকা থেকে সকল ট্রেন আটকা পড়েছে। এসময় চট্টগ্রাম অভিমুখী ৮০২ চট্টলা এক্সপ্রেস আটকা পড়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি ও এ নিয়ে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানী মেরুল বাড্ডায় সড়ক আটকে আন্দোলনে নেমেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষজন। মোহাম্মদপুরে বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করেছেন আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা।
মহাখালীতে রাস্তা আটকে রেখেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওইদিকে বনানীর কাকলীর মোড়েও অবস্থান নিয়েছেন সেখানকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাড্ডার নতুন বাজার ও কুড়িল এলাকাতেও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল বন্ধ আছে। নতুনবাজার এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তেজগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনির আখড়া ও কাজলা রোডের রাস্তার দুই পাশে আটকিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে দনিয়া কলেজ ও ড.মাহবুবুর রঝমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গতকাল সোমবার দিনভর ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ আর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন প্রায় তিনশ জন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা করে। ফলে সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল হয়ে যায়।
পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাত জন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে। গত ১১ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না। এরপর থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।