ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা দূর করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শুক্রবার ইইউভুক্ত দেশগুলো ইউরোপে থাকা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ অনির্দিষ্টকালের জন্য জব্দ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইইউ প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের রুশ সম্পদ জব্দ করেছিল। এর আগে প্রতি ছয় মাস অন্তর এসব সম্পদ জব্দের মেয়াদ বাড়াতে ভোটাভুটি করতে হতো, যেখানে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো মস্কো-ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর ভেটো দেওয়ার ঝুঁকি ছিল। অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্তে সেই অনিশ্চয়তা দূর হলো।
ইইউ জব্দ করা সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ২০২৬ ও ২০২৭ সালের সামরিক ও বেসামরিক বাজেটের চাহিদা পূরণে সর্বোচ্চ ১৬৫ বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই ঋণকে কার্যত ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, রাশিয়া ভবিষ্যতে কিয়েভকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিলে তবেই ইউক্রেন এই অর্থ পরিশোধ করবে। অর্থাৎ এটি ভবিষ্যৎ রুশ ক্ষতিপূরণের অগ্রিম ব্যবস্থা।
এই সিদ্ধান্ত বেলজিয়ামের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জব্দ করা সম্পদের বড় অংশ—প্রায় ১৮৫ বিলিয়ন ইউরো—বেলজিয়ামভিত্তিক আর্থিক সংস্থা ইউরোক্লিয়ারে সংরক্ষিত রয়েছে, যা রাশিয়ার আইনি চ্যালেঞ্জের ঝুঁকিতে আছে।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈঠকে ঋণ পরিকল্পনার চূড়ান্ত কাঠামো এবং বেলজিয়ামকে সম্ভাব্য আইনি ঝুঁকি থেকে সুরক্ষায় ইইউভুক্ত সব দেশের গ্যারান্টির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। ইউরোপীয় কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এই গ্যারান্টির অংশ হিসেবে জার্মানি ৫০ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ জানিয়েছেন, এ ঋণ পরিকল্পনার কোনো বিকল্প তিনি দেখছেন না।
এদিকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পরিকল্পনাকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়েছে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে মস্কোর একটি আদালতে মামলা করেছে রাশিয়া।
অন্যদিকে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যোগ্য সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ ইইউর জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ ডেকে আনবে। তিনি ‘আইনসম্মত পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে’ সবকিছু করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের সঙ্গে বার্লিনে বৈঠক করবেন। পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর নেতারাও আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেঙ্কো ইইউর এই সিদ্ধান্তকে ‘ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পথে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।