ইসলামের নির্দেশনা সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়

প্রকাশকালঃ ২২ আগu ২০২৩ ০৫:০৯ অপরাহ্ণ ২৩৯ বার পঠিত
ইসলামের নির্দেশনা সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়

সলাম শান্তির ধর্ম। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন শান্তিবাদী। তাঁর প্রচারিত ইসলাম ধর্ম (যা আল্লাহ থেকে প্রদত্ত) যারা অনুসরণ করে তাদেরও এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে মুসলিম—যার অর্থ শান্তিপ্রিয়। ইসলাম ধর্মে একে অন্যকে সালাম দেওয়া অর্থাৎ একে অন্যের শান্তি কামনা করাও হচ্ছে ধর্মীয় বিধান।

এ থেকে দেখা যাচ্ছে যে ইসলামের পরিবেশে হচ্ছে শান্তিময় পরিবেশ। শান্তিময় পরিবেশের জন্য ইসলামে যে পদক্ষেপগুলো পরিদৃষ্ট হয়—তার মধ্য থেকে কয়েকটি ব্যাপারে নিম্নে বর্ণনা করা হলো—

ক্রোধ সংবরণ, অহংকার ও ঝগড়া পরিহার : ক্রোধ, অহংকার ও ঝগড়া সমাজে অশান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। ক্রোধ সম্পর্কে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ এমন কল্যাণকামীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)


অহংকার সম্বন্ধে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৮)

ঝগড়া সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে বিধায় ঝগড়াকারীকে লোকে পছন্দ করে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত, যে অত্যধিক ঝগড়াকারী।’ (সহিহ বুখারি)

আপস-নিষ্পত্তি করে দেওয়া, অত্যাচার না করা, ক্ষমা করা : আপস-নিষ্পত্তি সমাজে শান্তি সৃষ্টি করে; অত্যাচার সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। ক্ষমা করা দ্বারা ভুক্তভোগীর অশান্তি দূর হয়।


এমনকি কোনো কোনো ক্ষমাতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যেমন—মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পর মক্কাবাসী কাফিরদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা। আপস-নিষ্পত্তি করে দেওয়া, অত্যাচার না করা, ক্ষমা করা সম্বন্ধে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ; কিন্তু যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে; আল্লাহ অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪০)

পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য : পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করলে, তাঁদের ভালোভাবে দেখাশোনা করলে, তাদের প্রতি অনুগত হলে পরিবারে শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং ছেলে-মেয়েদের উন্নতির পথ সুগম হয়। মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য সম্বন্ধে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘তোমরা (তোমাদের) মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের (সঙ্গে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না, তাদের ধমক দিয়ো না এবং তাদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসলাঈল, আয়াত : ২৩)

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক তিক্ত থাকলে সমাজে-রাষ্ট্রে অশান্ত পরিবেশ গড়ে ওঠে। মহানবী (সা.)-এর উদ্যোগে মদিনার মুসলমান, পৌত্তলিক ও ইহুদিদের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘মদিনা সনদ’-এ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার বিষয়টি ছিল অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘দ্বীনে (ধর্মে) কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)


সব সম্প্রদায়ের প্রতি ন্যায়বিচার করা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য অপরিহার্য। অমুসলমানদের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্য মুসলমানদের নির্দেশ দিয়ে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে অবিচল থাকবে। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে তোমরা ন্যায়বিচার করবে না। তোমরা ন্যায়বিচার করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)

নারীর অধিকার : মানবসমাজের অর্ধেকই হচ্ছে নারী। নারীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে মানবসমাজ শান্তিময় হয়ে উঠতে পারে না। নারীদের অধিকারের ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর ন্যায়সংগত অধিকার আছে, তেমনি স্ত্রীদেরও অধিকার আছে পুরুষদের ওপর।’ (সুরা বাকরা, আয়াত : ২২৮)

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করে।’ (তিরমিজি)


স্ত্রীর প্রতি ভালো আচরণ করার জন্য কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সম্মানজনক জীবনযাপন করো, এমনকি তোমরা যদি তাদের পছন্দ না-ও করো, এমনও হতে পারে, যা কিছু তোমরা পছন্দ করো না তার মধ্যেই মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রেখে দিয়েছেন।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ১৯)

ইসলামে নারীর মাতা-পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের অধিকার, অর্থ উপার্জনের অধিকার ও স্বাধীনভাবে নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘পুরুষরা যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য অংশ (হবে); আবার নারীরা যা কিছু উপার্জন করে তা তাদেরই প্রাপ্য অংশ (হবে)।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ৩২)

এখানে উল্লেখ্য যে ইসলামে পারিবারিক খরচ চালানোর দায়িত্ব হচ্ছে পুরুষের ওপর; নারীর ওপর নয়।


ইসলাম ধর্মে পুত্র-কন্যাদের মধ্যে পার্থক্য করতে নিষেধ করেছে। কন্যাসন্তান প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কোনো কন্যাসন্তান থাকে আর সে তাকে জীবিত অবস্থায় কবর দেয় না, তাকে অবহেলা করে না, অন্য সন্তান অর্থাৎ ছেলেসন্তানকে কন্যাসন্তানের ওপর প্রাধান্য দেয় না, সে ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ)

ইসলামে নারীর মান-মর্যাদাকে অতিব গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ আরোপ করে; অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত না করে তাদের ৮০টি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৪)

কোরআন শরিফে আরো বলা হয়েছে, ‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ও বিশ্বাসী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা ইহলোকে ও পরলোকে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২৩)


আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও প্রতিবেশীদের প্রতি কর্তব্য : আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও প্রতিবেশীদের প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করলে সমাজে শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় বা বিরাজ করে। আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করার ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এ শপথ না করে যে তারা আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদের কোনো সাহায্য করবে না, তাদের বরং উচিত তাদের ক্ষমা করে দেওয়া (অন্যায় করে থাকলে) ও তাদের দোষ-ত্রুটি (থাকলে) উপেক্ষা করা; তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দায়ালু।’ (সুরা আন-নুর, আয়াত : ২২)

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চায় যে তার জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো আচরণ করে।’ (বুখারি)

প্রতিবেশীর প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির প্রতিবেশী তার অত্যাচার ও অন্যায় আরচণ থেকে নিরাপদ নয় সে (ব্যক্তি) জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম)