অযত্ন-অবহেলায় কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার, ইতিহাস জানে না তরুণরা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৬ অপরাহ্ণ   |   ৮২ বার পঠিত
অযত্ন-অবহেলায় কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার, ইতিহাস জানে না তরুণরা

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশে ময়লার স্তূপ। অপরিচ্ছন্ন শহীদ মিনারের মূল বেদি। মূল বেদির পেছনে যত্রতত্র মূত্র বিসর্জনের চিহ্ন ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের বোতল পড়ে আছে। শহীদ মিনারের পাদদেশে ধূমপান করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। 
 

শুক্রবার ( ২১ ফেব্রুয়ারি ) সকালে কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম শহীদ মিনারের চিত্র এটি।
 

শিক্ষার্থীরাও জানেন না জেলার প্রথম শহীদ মিনারের ইতিহাস। এটি জেলার প্রথম শহীদ মিনার হলেও অযত্ন, অবহেলা ও প্রচার না থাকায় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
 

কুড়িগ্রাম পৌর শহরের মোল্লাপাড়ায় কুড়িগ্রাম- ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রবেশপথে এই শহীদ মিনারের অবস্থান। কলেজ প্রাঙ্গণের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আরেকটি শহীদ মিনার রয়েছে। সেখানেই সবাই ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান। শিক্ষার্থীদের কাছে অজানা এই শহীদ মিনারের ইতিহাস।
 

কলেজ সূত্রে জানা যায়, দুটি শহীদ মিনারই কলেজের জমিতে অবস্থিত। নতুন শহীদ মিনারেই কলেজের সব অনুষ্ঠান পালিত হয়। তবে মাতৃভাষা দিবসে জেলার প্রথম শহীদ মিনারেও ফুল দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হন। ওই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুল ও মাইনর স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকজন ছাত্রনেতা শহরে মিছিল বের করেন।
 

মিছিলে অংশ নেওয়া একজন সামিউল হক (৮৬)। তিনি কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৭৩ সালে সেখান থেকে অবসর নেন। পরে বাংলাদেশ স্কাউটস এর নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গাজীপুর যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০০২ অবসর নেন। কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম শহীদ মিনাররের বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
 

সামিউল হক বলেন, ‘আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী আলোচনা করে কুড়িগ্রাম শহরের ১ নম্বর স্কুলকে ভেন্যু করে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার ডাক দিই। পরে সেই মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভায় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে ওই সময় আমাদের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু আমরা ভেতরে-ভেতরে সংগঠিত হতে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম ভূরুঙ্গামারী সড়কসংলগ্ন খেলার মাঠে কাদামাটি দিয়ে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। ওই বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সেই শহীদ মিনার ভেঙে দেয়। কিন্তু ছাত্ররা সেই রাতেই আবার শহীদ মিনার তৈরি করেন। পরদিন কুড়িগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রথম শ্রদ্ধা জানান।’
 

সামিউল হক আরও বলেন, ১৯৫৬ সালে ইট-সিমেন্ট দিয়ে শহীদ মিনারটি আবারও নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর আবারও শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়, যা বর্তমানে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শহীদ মিনারটি যথাযথ সম্মান পায় না।
 

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলেজে জেলার প্রথম শহীদ মিনার আছে অথচ আমরা কেউ তা জানি না। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষকেরাও কেউ জানাননি।’
 

কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী বলেন, ‘কলেজের একই ক্যাম্পাসে আরও একটি শহীদ মিনার রয়েছে। তাই পুরোনো শহীদ মিনারটি একটু উপেক্ষিত থাকে। তবে প্রতিটি দিবসে আমরা দুই শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এ বছর থেকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারির র‍্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এই শহীদ মিনারের ইতিহাস জানাব।’