জীবন চক্রে মানুষের বন্ধু ও শত্রু তৈরি হয়। তবে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা জরুরি। কারণ সাধারণত মানুষ জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুদের অনুসরণ করে। ভালো বন্ধুর সাহচর্য পেয়ে মানুষ যেভাবে পৃথিবী বদলে দিতে পারে, তেমনি অসৎ বন্ধুর খপ্পরে পড়ে মানুষ ইহকাল ও পরকালে নিঃস্ব হতে পারে।
তাই কারো ভালো ও মন্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার বন্ধু-বান্ধবের খোঁজখবর নেওয়া হয়। কারণ হাদিসে এসেছে, ‘মানুষ বন্ধু-বান্ধবের রীতিনীতি অনুসণ করে। অতএব তোমরা ভালো করে দেখো কে কার সঙ্গে মিশছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)
একজন মুমিনের জন্য ঈমানের ক্ষতি হতে পারে এমন বন্ধুত্বের বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসলামে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অজ্ঞাতসারে হঠাৎ করে কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে। যখন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে তবে মুমিনরা ছাড়া। হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখ করবে না।
যারা আমার নিদর্শনগুলো বিশ্বাস করেছ এবং যারা মুসলিম। তোমরা তোমাদের পরিবার নিয়ে আনন্দচিত্তে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৬৭-৭০)
বন্ধুদের জীবনযাপন ও চিন্তা-ভাবনা অন্যের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। তা যেমন কল্যাণকর হতে পারে, তেমনি অকল্যাণও বয়ে আনতে পারে। হাদিসে ভালো বন্ধুকে সুগন্ধি বিক্রেতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
কারণ সুপরামর্শ গ্রহণ না করলেও ভালো বন্ধুর মাধ্যমে তা জানার সুযোগ হয়। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো মেশক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাঁপরের মতো। তুমি আতর বিক্রেতা থেকে রেহাই পাবে না। হয়তো তুমি আতর কিনবে, নয়তো তার সুবাস পাবে। আর কর্মকারের হাঁপর হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো তুমি এর দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২১০১)
তাই বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া কর্তব্য। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কেউ কাউকে ভালোবাসলে, বন্ধুত্ব করলে বা একসঙ্গে কিছু সময় কাটালে তাদের জন্য বিশেষ মর্যাদা। মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ভালোবাসা ওই সব ব্যক্তির জন্য অবধারিত, যারা আমার জন্য পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে। যারা আমার জন্য একত্র হয়। যারা আমার জন্য একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। যারা আমার জন্য পরস্পর খরচ করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২০৩০)
সামাজিক জীবনে ভালো বন্ধুর পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; বরং অনেক ক্ষেত্রে বন্ধুদের সঠিক দিকনির্দেশনা না পেলে চলাই অসম্ভব। তাই খাঁটি বন্ধু মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে বাঁচতে এবং ভুল-ভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করে। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একজন মুমিন অন্য মুমিনের আয়নার মতো। মুমিন মুমিনের ভাই। একজন অন্যজনের সহায়-সম্পদ সংরক্ষণ করে এবং (তার অনুপস্থিতিতে) সে তার পক্ষ থেকে সব দায়িত্ব পালন করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘একজন মুমিন অন্য মুমিনের আয়নার মতো। একজন অন্যের মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখলে তা ঠিক করে দেয়।’ (আল-আদব আল-মুফরাদ, হাদিস : ১৭৭)মহান আল্লাহ আমাদের উত্তম বন্ধু দান করুন, যারা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের সঙ্গী হবেন।