ঢাকা প্রেস
আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
উজান থেকে নেমে আসা পানিতে টই-টুম্বুর রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। এই পানি স্রোতে ইতিমধ্যেই রাঙামাটির নিন্মাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জলবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজ জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এতে করে রাঙামাটির অন্তত ১০ হাজার প্রার্ন্তিক কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদে হু-হু করে বাড়তে থাকা পানির নীচে কৃষিজ জমি তলিয়ে যাওয়ার ফলে অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে যদি সরকারীভাবে অনুদা প্রদান করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে চরম দূরাবস্থার মধ্যে পড়বে। রাঙামাটিতে বসবাসরত প্রার্ন্তিক জনগোষ্ঠির লোকজন কৃষি কাজ, মাছ আহরণ ও কাঠের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে সরকারী নিষেধাজ্ঞার কারনে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ, কাঠের ব্যবসাও সীমিত; এমনিতর পরিস্থিতি কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে কৃষিজ জমি তলিয়ে যাওয়ায় অত্রাঞ্চলের প্রার্ন্তিক পর্যায়ে ভবিষ্যতে খাদ্য ও অর্থ সংকট প্রকট হয়ে উঠবে বলে ধারনা করছেন স্থানীয়রা।
দূর্গমাঞ্চলের দূর্গত মানুষদের অনেকেই এখনো প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়নি বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরাও দূর্গম এলাকাগুলোতে ত্রান নিয়ে যেতে পারছেনা। এদিকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট। সর্বশেষ সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বর্তমানে পানি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৮৪ ফুট মীনস সি লেভেল। এমন অবস্থায় রাঙামাটিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়া না হলে যেকোনো সময় উপচে পড়বে কাপ্তাই হ্রদের পানি। রাঙামাটি শহরের রসুলপুর, শান্তিনগর আসামস্তি, ব্রাক্ষণটিলা, রাঙাপানি, হাসপাতাল এলাকা, পাবলিক হেলথ, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, পুরানবস্তিসহ কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে দাবি স্থানীয়দের।
রাঙামাটি শহরের পাবলিক হেলথ এলাকার বাসিন্দা মোল্লাসহ আরো কয়েকজন জানান, ‘কয়েক দিন ধরে আমাদের বাড়িতে পানি ওঠে। আমাদের যাতায়াতের রাস্তা ডুবে গেছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি।’ চার উপজেলার ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত: কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃ্দ্ধি পেয়ে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঅঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমিতে পানি উঠে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাঙামাটি কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, মূলতঃ ১০০ এমএসএল এর নীচে বিশেষ করে ৯৬ থেকে ৯৮ এর মধ্যে যদি কাপ্তাই হ্রদের পানি রাখা হয়, তাহলে আমাদের অত্রাঞ্চলের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হতো না। কিন্তু বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়তেই রয়েছে। এতে করে আমাদের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
যতদ্রুত হ্রদের পানি কমানো যায়, ততই আমাদের কৃষকরা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। এদিকে রাঙামাটির পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যানেজার জানিয়েছেন, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট চালু রয়েছে। এতে ১৬টি জলকপাট দিয়ে ৬ ইঞ্চি করে পানি কর্ণফুলি নদীতে গিয়ে পড়ছে। সোমবার(২৬ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত কাপ্তাই লেকের পানির লেভেল ছিলো ১০৮.৮৪ ফুট মীনস সি লেভেল। এদিকে স্থানীয় সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাদের সাধ্যমতো ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পাহাড়ের বিভিন্ন নিন্মাঞ্চলে বানবাসী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।