রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র দরবারে হামলার ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুর মামলায় আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে একই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—
জীবন সরদার (২০), পিতা মো. শওকত সরদার, গ্রাম ময়ছের মাতুব্বার পাড়া, উজানচর ইউনিয়ন
সাগর ফকির (২১), পিতা আ. মালেক ফকির, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড
সাইফুল ইসলাম শুভ (১৯), পিতা হেলাল উদ্দিন শেখ, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড
ফেরদৌস সরদার (৩৬), পিতা মো. নিজামউদ্দিন, গ্রাম ডিগ্রীরচর, ইশন গোপালপুর ইউনিয়ন, ফরিদপুর
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রবিবার রাতে অভিযান চালানো হয়। এতে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ছয়জনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। তবে এখনো নুরাল পাগলার মাজার ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
উল্লেখ্য, ৫ সেপ্টেম্বর রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই মো. সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি সম্পদ ধ্বংসের অভিযোগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এর আগে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে নুরাল পাগলার দরবারে একাধিক দফায় হামলা চালানো হয়। এসময় ১৩ দিন আগে কবর দেওয়া নুরাল পাগলার মরদেহ তুলে এনে ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং অবশিষ্ট ছাই পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হন, যার মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য ও দুজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছেন। পুলিশের দুটি গাড়ি ও ইউএনও’র গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় আহত হয়ে রাসেল মোল্লা নামে একজন মারা যান।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়ালন্দ পাক দরবার শরীফ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দরবারের ভেতরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। দরবারের ভবন, ঘরবাড়ি ও কক্ষগুলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চিহ্ন স্পষ্ট। টিনের ঘরগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে এবং বড় ভবনগুলোও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির ঘোষিত কর্মসূচি শেষে জনতা দরবারের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিক্ষুব্ধরা দরবারে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় এবং নুরাল পাগলার কবর খুঁড়ে মরদেহ তুলে আগুনে পোড়ায়।
ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও সম্পদ ধ্বংসের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে নুরাল পাগলার পরিবার কিংবা নিহত রাসেল মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি।