ময়মনসিংহের তারাকান্দায় টর্চার সেলে নির্যাতন, ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১২ আগu ২০২৫ ০৩:৪২ অপরাহ্ণ   |   ৪২ বার পঠিত
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় টর্চার সেলে নির্যাতন, ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা:-


ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নে ছাত্রদলের নেতা হিজবুল আলম জিয়েসের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করা হতো। এই টর্চার সেলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি তোলপাড় সৃষ্টি করে। ঘটনার প্রতিবাদ করায় ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার নিজেও হামলার শিকার হন এবং পরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জিয়েসসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিজবুল আলম জিয়েস (২৬) বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি মাঝিয়ালি গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জিয়েস চাঁদাবাজি, মাদক সেবন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় দৌরাত্ম্য চালাচ্ছিলেন।
 

গত শনিবার বিকেলে মাঝিয়ালি বাজারের একটি সেলুনে চুল কাটানোর পর মালিক হক মিয়ার কাছ থেকে মজুরি না দিয়ে জিয়েস উল্টো ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় জিয়েস সেলুন বন্ধ করে দিয়ে মালিককে মারধর করেন। এ সময় হক মিয়ার বড় ভাই লাক মিয়াকেও তার দোকানে হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়।
 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯ আগস্ট মামুন সরকারের আশ্বাসে সেলুন খোলা হয়, কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যায় আবারও জিয়েস ও তার সহযোগীরা হামলা চালিয়ে হক মিয়াকে মারধর করেন। বিষয়টি জানালে মামুন সরকার ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত হন। এরপর ১১ আগস্ট দুপুরে মামুন সরকার থানায় এই ঘটনার অভিযোগে মামলা করেন।
 

ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার অভিযোগ করেন, জিয়েস ৫ আগস্টের পর থেকে টর্চার সেল চালানো, চাঁদাবাজি, মাদক সেবনসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করছেন। তিনি বলেন, “চুল কাটানোর পর নাপিতকে টাকা না দিয়ে উল্টো টাকা দাবি করা ছাত্রদলের আদর্শের পরিপন্থী। এই ধরনের অপরাধের প্রতিবাদ করায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর মারধর করা হয়েছে।”
 

বিপণন ব্যবসায়ী হক মিয়া জানান, জিয়েস চুল কাটানোর পর ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে মারধর করে সেলুন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে দোকান খোলার সময়ও আবারো হামলা চালানো হয় এবং মামুন সরকারকেও আঘাত করা হয়।
 

স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, জিয়েস নিজের পুকুরপাড়ের একটি টিনশেড ঘরে একটি টর্চার সেল গড়ে তুলেছিলেন। সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তার দুই সহযোগী রাফি ও আবদুল্লাহ এক যুবককে মারধর করছেন এবং ভিডিও কলে জিয়েসকে রেখে তার গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছেন। পরে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে ওই যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
 

টর্চার সেলের নির্যাতনের শিকার জুয়েল ও রাসেল নামের দুই ব্যক্তি জানান, জিয়েস তাদের কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে টাকা আদায় করতেন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ভিডিও স্বীকারোক্তি করানোর জন্য বাধ্য করা হতো। প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তারা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
 

জানা গেছে, ১০ আগস্ট রাতে পুলিশের তৎপরতায় রাফি ও আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার পর ১১ আগস্ট রাতে জিয়েসকেও গ্রেপ্তার করা হয়। বানিহালা ইউনিয়নের একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু তাহের জানান, জিয়েস প্রায়ই মাদকাসক্ত থাকতেন এবং বিভিন্ন সময় মানুষকে হুমকি দিয়েছিলেন। তার টর্চার সেল বন্ধ করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
 

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। জিয়েসকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হবে। আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত চলছে।
 

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন হিজবুল আলম জিয়েস। গ্রেপ্তারের পর ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে সাময়িকভাবে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং দ্রুত তদন্ত শেষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।