আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও লুটপাটের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় জেলায় কর্মরত দুই সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সদর থানায় মামলাটি করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামি দুই সাংবাদিক হলেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, দৈনিক কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুক এবং নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশন, দৈনিক সংবাদের জেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির সূর্য। তাদের বিরুদ্ধে দোকানের মালামাল চুরি ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হলেও তাদের পরিচয় সাংবাদিক উল্লেখ করা হয়নি। এর মধ্যে আব্দুল খালেক ফারুককে যুবলীগ সদস্য এবং হুমায়ুন কবির সূর্যকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে ওই দুই সাংবাদিকের সাংগঠনিক পরিচয়ের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে এর কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদীর নাম মাহফুজার রহমান। তিনি রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে শহরের জেলা পরিষদ মার্কেটে ‘চুলা ঘর’ নামে প্রতিষ্ঠান চালু করে ব্যবসা করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা সবাই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় লোকজন। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বিকালে যুবলীগের আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালের নেতৃত্বে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জেলা পরিষদ মার্কেটে বাদীর দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। এ সময় আসামিদের কয়েকজন তাকে মারপিট করেন। রশি দিয়ে বেঁধে পিটুনি দেন। তার পকেট থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে যান। এ ছাড়া আসামিরা রুহুল আমিন দুলালের নির্দেশে দোকানে লুটপাট চালান। সেইসঙ্গে দোকানের গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন মালামাল অটোরিকশায় করে নিয়ে যান। এ নিয়ে কোথাও অভিযোগ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন আসামিরা। মামলায় লুটপাটের পরিমাণ ২৩ লাখ টাকা এবং দোকানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও তিন লাখ ৫৯ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়।
বাদী মাহফুজার রহমান দাবি করেছেন, অন্য আসামিদের সঙ্গে আব্দুল খালেক ফারুক এবং হুমায়ুন কবির সূর্য ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘উপস্থিত না থাকলে আসামি হবে কেন। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে বসে কথা বলবো।’ কোনও দলের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও দুই সাংবাদিকের সাংগঠনিক পরিচয় উল্লেখ করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দেননি বাদী।
মামলার বিষয়ে জানতে যুবলীগের আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালকে কল দিলে রিসিভ করেননি। জেলা যুবলীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক যুবলীগের কোনও পর্যায়ে যুক্ত নন, কখনও যুক্ত ছিলেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির বর্তমানে কোনও কার্যক্রম নেই। দেড় বছর আগে কমিটি ও কার্যক্রম বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনটির সাবেক একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদস্য পদ তো দূরের কথা, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির সূর্য কখনই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক বলেন, ‘দেশের প্রথম সারির একাধিক মিডিয়ায় কাজ করি, রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নই আমি। কারা কী উদ্দেশ্যে মামলা দিচ্ছে জানি না। তবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাই লক্ষ্য বলে মনে হয়।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ বলেন, ‘যে অভিযোগ তুলে দুই সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, তার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তারা পেশাদার সাংবাদিক। শুধুমাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যে দুই সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তাদের এভাবে আসামি করায় আমরাও আতঙ্কে আছি।’