রহস্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দক্ষ নেতৃত্বের

প্রকাশকালঃ ৩১ মে ২০২৩ ১২:১৩ অপরাহ্ণ ৮৩ বার পঠিত
রহস্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দক্ষ নেতৃত্বের

মুসলিমদের লেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই, ‘দ্য লিডারশিপ অব মুহাম্মদ (সা.)’। এর লেখক জন অ্যাডায়ার। বিশ্বের সেরা ৫০টি বইয়ের লেখক তিনি। ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দানকারী এক বিশিষ্ট বিশ্বস্ত সেরা নাম, জন অ্যাডায়ার।

তিনি ছিলেন, ব্যবসায় নেতৃত্ব দানের প্রথম ব্রিটিশ অধ্যাপক। ব্যবসা এবং নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। যাতে তিনি বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন থেকে সেরা এবং সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দক্ষতা বাছাই করেন। যা যেকোনো আদর্শ নেতার মধ্যে থাকা অপরিহার্য।


এর মাধ্যমে জন অ্যাডায়ার বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী নেতৃত্ব সম্প্রদায়কে এই গুণাবলির আলোকে নেতা হতে শেখান।


জন অ্যাডায়ার প্রথমে ৫০টি বৈশিষ্ট্য বাছাই করে পৃথক করেন। সেখান থেকে সেরা দশটি নির্বাচন করেন। আধুনিক বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে একজন নেতার মধ্যে থাকা উচিত, এমন টপ-টেন (সেরা দশটি) বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করেন।

নানা ধরনের বই পড়ার মধ্য দিয়ে একটি কঠিন পর্যায় অতিক্রম করার পর সবশেষ ১১টি সেরা বৈশিষ্ট্যকে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা করতে সফল হন। তিনি লিখেছেন, এই ১১টি পয়েন্ট এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলো ছাড়া একজন আদর্শ নেতা হওয়া অসম্ভব। তিনি এই ১১টি পয়েন্টকে মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বের গুণাবলিকে ALTIS FOR ALL TIMES নামে প্রকাশ করেন। এবং সেগুলোকে ব্যাবসায়িক নেতৃত্ব পাঠ্যক্রমের অংশ করেন। জন অ্যাডায়ারের নির্বাচিত সেই ১১টি পয়েন্ট ধারাবাহিক লেখা হলো—


১. সৎ ও বিশ্বস্তঃ জন লিখেছেন, তিনি (সা.) যেকোনো পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এবং নবুয়ত প্রাপ্তির আগে ধীরে ধীরে নিজেকে আরবের ওই সমাজে একটি রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি সততা ও সত্যবাদিতায় এমন একজন চমৎকার ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, ইসলাম বিরোধী গোত্ররাও তার সততার সঙ্গে পরিচিত ও নিশ্চিত হন। মানুষ তাঁর প্রতি অনেক বেশি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে শুরু করে। তিনি তাঁর ব্যক্তিত্বকে কোনোভাবেই বিতর্কিত হতে দেননি। তাঁর প্রথম বৈশিষ্ট্যই ছিল প্রতিটি বিষয়ে সততা।

২. ভিশন বা প্রাথমিক উদ্দেশ্যঃ তিনি এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি কোনো দিকনির্দেশনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণের সময়, যদি, কিন্তু—এ জাতীয় শব্দের আশ্রয় নেননি। তাঁর চমৎকার একটি কৌশলী মন ছিল, যার সাহায্যে ভেতর থেকে অসামান্য সুন্দর নেতৃত্ব দিয়েছেন। যতক্ষণ না তিনি সমস্ত ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক এবং অন্যান্য বিবরণ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত না হতেন, তিনি কোনো লক্ষ্য প্রকাশ করতেন না।

৩. সাহসঃ তিনি অবিশ্বাস্য সাহসিকতার সঙ্গে সব ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করতেন। এমনকি তার শত্রুরাও তার নির্ভীক ক্ষমতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি কখনোই কোনো কিছুতে বিচলিত হতেন না।


৪. যোগ্যতাঃ তিনি তাঁর ক্ষমতায় এতটাই দক্ষ ছিলেন, তিনি যে পদেই দাঁড়িয়ে থাকতেন বা যে কাজই করতেন না কেন, তিনি তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিতে পূর্ণ করতেন। কখনোই তা অসমাপ্ত রেখে দিতেন না। এই কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তাঁর এসব বিষয় দর্শকদের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলত।

৫. ন্যায় ইনসাফের প্রতীকঃ কথাবার্তা, চালচলন ও অন্যান্য বিষয়ে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতেন না। অর্থাৎ মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে তার সত্য ও ন্যায়ের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন এবং নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতেন।


৬. সিদ্ধান্তমূলক ব্যক্তিত্বঃ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তিনি কখনোই অস্পষ্ট বা অসম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি দুই নৌকায় সওয়ার হতেন না (অর্থাৎ দুই ধরনের কথা বলতেন না)। তিনি সর্বদা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতেন। পরামর্শের মাধ্যমে তাঁর সিদ্ধান্তগুলো শক্তিশালী করতেন।


৭. অনন্য বাস্তব নেতৃত্বঃ তিনি তাঁর কথা ও কাজে পরিপক্ব এবং বাস্তবসম্মত ছিলেন। তিনি যা বলতেন তা অনুসরণ করতেন এবং  নিজেই এর উদাহরণ স্থাপন করতেন। তিনি শ্রমিক ও আজাদকৃত দাসদের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করতেন। কর্ম ছাড়া নিছক কথায় তিনি কখনোই বিশ্বাসী ছিলেন না।

৮. প্রজ্ঞাঃ পর্যবেক্ষণ, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেকোনো দৃশ্যকে চূড়ান্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে দেখার অনন্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। যেকোনো আসন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তিনি সব সময় আগে থেকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন।


৯. ধৈর্য ও ক্ষমাঃ তিনি অত্যন্ত নমনীয় এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তি ছিলেন। প্রতিশোধের পরিবর্তে ক্ষমাতে বিশ্বাসী ছিলেন। ধৈর্যশীলতার কারণে তিনি নিজেকে সব ধরনের পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছেন।

১০. সহানুভূতিশীল এবং উষ্ণ মনোভাবঃ কোমল হৃদয়, মৃদু ভাষা ও হিকমতপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন। প্রশংসা করা এবং খোলাখুলিভাবে অন্যদের প্রশংসা করা, তাঁর অভ্যাস ছিল। সাক্ষাতে সব সময় হাসি দিয়ে উষ্ণতা প্রকাশ করতেন। তিনি প্রতিপক্ষের কথা মনোযোগসহ শুনতেন এবং তিনি তাঁর বক্তব্য অন্যদের কাছে স্পষ্ট করতে সক্ষম ছিলেন।

১১. আধ্যাত্মিক ও মানসিক বুদ্ধিমত্তাঃ সর্বদা আধ্যাত্মিক এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তিনি বুদ্ধিভিত্তিক প্রমাণ দিয়ে সমস্যা সমাধান করতেন। মানুষের মনে আশা সঞ্চার করতেন। মানুষকে অর্থপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন যাপন করানো এবং সে বিষয়ে মানুষকে বোঝানোর এক চিত্তাকর্ষক ক্ষমতা রাখতেন। এটা আমার বিশ্বাস যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের একটি দিককেও সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করা ও প্রশংসা করা অসম্ভব। তাঁর সমগ্র বরকতময় জীবনকে পূর্ণরূপে চিত্রায়ণ করা কারো বুঝ-বুদ্ধি ও কলম দিয়ে সম্ভব নয়।

এই ১১টি বিষয় ছাড়াও রাসুল (সা.)-এর জীবনের অগণিত দিক আমাদের সামনে রয়েছে। রাসুলের উত্তম আদর্শের জন্য কোরআনে কারিমই যথেষ্ট। জগতের প্রতিপালক যেন আমাকে এবং আমাদের সকলকে নবী (সা.)-এর বরকতময় পদাঙ্ক অনুসরণ করার এবং আমাদের জীবনকে তাঁর রঙে রাঙানোর তাওফিক দান করেন।