জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক কোর্স বন্ধ

প্রকাশকালঃ ০১ জুন ২০২৪ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ ৬৫৮ বার পঠিত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক কোর্স বন্ধ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মূল ক্যাম্পাসে স্নাতক প্রোগ্রাম চালুসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা অনুসারে এই কোর্স বন্ধ থাকবে। ফলে শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে কোর্স শেষ করতে হবে। নতুবা নতুন করে অন্য কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়টির চারটি কোর্সে ১৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের প্রথম বর্ষের সেশন শেষ হয়েছে। ঈদের পর ফাইনাল পরীক্ষাও হওয়ার কথা ছিল। এই সময়ে এসে তারা কোর্স বন্ধের খবর পেলেন। মাঝপথে এভাবে কোর্স বন্ধের নোটিশ পেয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ঐ সব কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দ ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করতে জাবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘আমরা বিজ্ঞপ্তি দেখে, পরীক্ষা দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে চাই। কোনো সরকারি বা বেসরকারি কলেজে পড়তে চাই না। এর ব্যত্যয় হলে উচ্চ আদালতে যাব।’

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীকে অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর সুযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস জামান ইত্তেফাককে বলেন, সেই সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলে। তাই কারো অনুরোধে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সম্ভব হয় না।

 

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভর্তির সুযোগ আছে। এসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেই দায় নিতে হবে। কারণ, শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়েই এসব শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি একপ্রকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকেই একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান এবং এরই আলোকে অনার্স কোর্স চালু করেছিলাম। কিন্তু সরকার এই কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। এটা আমরা প্রতিপালন করব। শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আরো বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে শিক্ষার্থীদের পছন্দ ও প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির পার্শ্ববর্তী কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করতে। কিন্তু প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিয়ম অনুযায়ী চলে। তারা আমাদের কথা শুনবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো কলেজেও পড়তে চাইবে না। তাহলে আমরা কী করব? শিক্ষার্থীরা চাইছে তাদের এই কোর্স যেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই সম্পন্ন করে দেওয়া হয়। বিয়ষটি নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

 

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ জুলাই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স বিষয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন আহ্বান করা হয়। ২৭ জুলাই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয়। ১২ সেপ্টেম্বর অন-ক্যাম্পাস স্নাতক কোর্সে ভর্তির ফল প্রকাশ করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ভর্তিচ্ছুদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ভর্তি। এরপর  চলে পাঠদান।

 

তবে শুরু থেকেই এই কোর্সে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আপত্তি দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে আইনি মতামত দেয়। চিঠি চালাচালিতেই বছর পার হয়ে যায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের মতামত নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়টির কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দেয়।

 

এদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কোর্স বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, একাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান কমিটির সুপারিশের আলোকে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়েই মূল ক্যাম্পাসে অনার্স প্রোগ্রাম চালু করা হয়। যুগোপযোগী সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসমূহের মধ্যে সহযোগিতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে ‘কলেজসমূহে’ পঠিত সব বিষয় স্বল্প পরিসরে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে মডেল হিসেবে পাঠদান করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, মূল ক্যাম্পাসে অনার্স প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য একাডেমিক ভবন, ল্যাব, স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ ও দেশি-বিদেশি উচ্চতর ডিগ্রিধারী ৮০ জন শিক্ষক রয়েছেন।