ফরিদপুরের চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব: কৃষকদের মাঝে গামবুট বিতরণ
প্রকাশকালঃ
০১ জুলাই ২০২৪ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ ৬৮১ বার পঠিত
রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বাড়ায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফরিদপুরের চরাঞ্চলের দুই শতাধিক কৃষকদের মধ্যে গামবুট বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে প্রতিষেধক (গামবুট) বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের চরাঞ্চলে সম্প্রতি রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। সাপের আতঙ্কে ক্ষেত খামারে কাজ করতে পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক।
ক্ষেতেই অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকায় ইতিমধ্যেই সাপের কামড়ে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন সাপে কামড়ানো বেশির ভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি। রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চরাঞ্চলের চাষীদের মধ্যে গামবুট বিতরণ করা হয়েছে।
রবিবার (৩০) বিকেলের দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চত্বরে নারী-পুরুষ কৃষকদের হাতে গামবুট তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার (পিএএ)। ফরিদপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলখ্যাত নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের দুই শতাধিক কৃষকের মধ্যে গামবুট বিতরণ করা হয়।
এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়াছিন কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনীম, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন।
গামবুট নিতে আসা রাশেদ শেখ নামে কৃষক বলেন, এতদিন সাপের ভয়ে ক্ষেতে যেতে পারছিলাম না।গামবুট পেয়েছি এখন নির্বিঘ্নে জমিতে যেতে পারব। ক্ষেতের ফসল তুলে ঘরে আনতে পারব। অনেক ফসল ইতিমধ্যেই জমিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া শ্রমিকরাও ভয়ে ক্ষেতে নামছিল না। অপর চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদাম কিছুটা তুলতে হয়েছে।
কৃষি কাজে শ্রমিকরাও ক্ষেতে যেতে চায় না। এ কারণে নিজেদেরই ঝুঁকি নিয়ে ফসল তুলতে হচ্ছে। গামবুট পেয়েছি এখন ক্ষেতে গিয়ে ফসল তুলতে পারব। গামবুট পেয়ে আমরা অনেক খুশি। রোকেয়া বেগম নামে এক কৃষানী বলেন, নদীর ধারেই আমাদের বাড়ি। সাপের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি না। স্বামীসহ সন্তানরা মিলে আমরা সবাই ক্ষেতে কাজ করি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় ক্ষেতে যেতে হয়েছে। সাপের ভয়ে তিল ক্ষেত থেকে তুলতেই পারিনি এখনো। তিল ক্ষেতের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক স্যারের দেওয়া গামবুট পড়ে এখন ক্ষেতে যেতে পারব। চলাচলেও কোনো সমস্যা হবে না। নিশ্চিন্তে ফসল ঘরে তুলে আনতে পারব আশা করছি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, রাসেলস ভাইপারের ভয়ে কৃষকরা ক্ষেতে ফসল তুলতে যেতে পারছিলেন না। কৃষকদের কথা চিন্তা করে সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে তাদেরকে গামবুট দেওয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের চাষীদের মধ্যে আজ গামবুট দেওয়া হলো। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের চাষীদের মধ্যে গামবুট বিতরণ করা হবে।
এ ছাড়া সাপের সচেতনতায় মাইকিংসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুদ করা হয়েছে। চরাঞ্চলের কোনো চাষীকে সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে আনার জন্য চরাঞ্চলে স্পিড বোটের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। কৃষকের সব ধরনের সহযোগীতায় জেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।