ঢাকা প্রেস নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর এক নির্বাহী আদেশে আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সহায়তা বন্ধ হচ্ছে না। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।” তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার এ বছর একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করবে, যেখানে ১৭০টি দেশ অংশগ্রহণ করবে। জাতিসংঘ এই সম্মেলনের সহ-আয়োজক।
তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে চলমান সিভিল ওয়ারের ফলে সেখানে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের কারণে গত এক বছরে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা স্থগিতের নির্দেশনা রোহিঙ্গাদের পুষ্টি ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অর্থায়নে প্রভাব ফেলবে না। এজন্যও প্রধান উপদেষ্টা ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রবিবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার ধন্যবাদ বার্তা তাদের জানানো হয়।
প্রেস সচিব আরও জানান, দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেখানে ৪৭টি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সফরের অংশ হিসেবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে বৈঠক হয়, যেখানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দেন।
জার্মান চ্যান্সেলর স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশে একটি বিজনেস ডেলিগেশন পাঠানোর ঘোষণা দেন। প্রেস সচিব আশা প্রকাশ করেন, এর মাধ্যমে জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
সফরকালে পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনার বিষয়ে ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
প্রেস সচিব জানান, “পাচার হওয়া অর্থ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের সম্পদ। আমরা এটি যেকোনো মূল্যে ফেরত আনব। বিশ্বনেতাদের সমর্থন আমাদের কাজে সহায়ক হবে।”
জুলাই-অগাস্টে মিয়ানমারে সংঘটিত নৃশংসতা নিয়ে জাতিসংঘ শিগগিরই তাদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছিলেন পালাবেন না, কিন্তু তিনি পালিয়েছেন। তার সহযোগীরা এখন সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” আইন ভঙ্গকারী যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।
এই ধরনের পদক্ষেপ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।