সেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের সেতু, দূর্ভোগ লাঘব প্রত্যন্ত মানুষের 

প্রকাশকালঃ ২৬ আগu ২০২৪ ০৯:৪৩ অপরাহ্ণ ৫৬৬ বার পঠিত
সেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের সেতু, দূর্ভোগ লাঘব প্রত্যন্ত মানুষের 

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় হলহলিয়া নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু নির্মাণে বদলে গেছে একটি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। গ্রামবাসীর সেচ্ছাশ্রমে এবং উপজেলা প্রশাসনের কিছু আর্থিক সহযোগিতায় এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

 

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের মিয়ারচর গ্রামের হলহলিয়া নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে ৪শ ফুট লম্বা কাঠের সেতু। সেতু হওয়ার আগে দুপাশের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এজন্য স্কুলকলেজগামী শিক্ষার্থীদের সারা বছর ভোগান্তি পোহাতে হতো।

 

পরে গ্রামবাসীর সেচ্ছাশ্রমে প্রথমে মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়। তারপর উপজেলা প্রশাসনের কিছু আর্থিক সহযোগিতায় কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। হলহলিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি এখন দৃষ্টিনন্দন।

 

সেতু নির্মাণের ফলে মিয়ারচর গ্রামের মানুষের চলাচলের পথ সুগম হলো। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ লক্ষাধিক টাকা। সময় লেগেছে প্রায় ১ মাস। পরে গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেতুটি। গ্রামবাসীদের এখন সেই দুর্ভোগ শেষ হলো। এই সেতু দিয়ে এখন মানুষ ব্যাটারিচালিত যানবাহনসহ মোটরসাইকেল নিয়ে সহজে চলাচল করছে। তবে কারও কাছে পারাপারে সেতু ভাড়া নেওয়া হয়না। গ্রামবাসীর দাবি যতদ্রুত সম্ভব এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।

 

মিয়ারচর গ্রামের বেলাল হোসেন, ফুলমিয়া, আবুল হোসেন, আলেয়া বেগম, মনির হোসেনসহ অনেকেই বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে নদী পারাপারে নৌকাই ছিল একমাত্র আমাদের ভরসা। সবার সহযোগিতায় এখন কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু হওয়ায় আর কষ্ট করে নৌকার অপেক্ষায় থাকতে হবে না। দাবি নদীটির ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে আমাদের ৫০ বছরের কষ্ট দূর হবে। পাশাপাশি একসময় আমাদের সন্তানরাও লেখাপড়া করে মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে।’

 

চরশৌলমারী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সজিব আহমেদ বলেন, ‘কাঠের সেতুটি হওয়ায় আমরা এখন সহজে স্কুলে যেতে পারব। আগে নৌকার জন্য বসে থাকতাম এখন আর বসে থাকা লাগবে না। সঠিক সময়ে আমরা পরীক্ষা ও ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারব। পাশাপাশি স্থায়ী ব্রিজ হলে সবার কষ্ট দূর হতো।’

 

চরশৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলে, ‘কয়েকদিন আগে নৌকার জন্য থাকতে থাকতে পরে নদী সাঁতরে স্কুল যেতাম। এহন আর সাঁতরা লাগবে না। আমরা এহন সেতুর উপর দিয়ে স্কুল যাবার পারুম’।

 

চরশৌলমারী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান জানান, ‘মিয়ারচর গ্রামেই প্রায় ২শ শিক্ষার্থী আছে। তারা এতো দিন নদী পারাপারে খুব কষ্ট করে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসতো। মাঝেমধ্যে নদী পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এখন সেতু হওয়ায় সহজে শিক্ষার্থীরা পারাপার হতে পারবে।

 

তিনি আরও বলেন, সেখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা গেলে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে।’

 

চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, ‘৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে কিছুটা রাস্তা করা হয়েছিল। পরে মিয়ারচর গ্রামবাসী তাদের সেচ্ছাশ্রমে রাস্তাসহ কাঠের সেতু নির্মাণ করেন।’

 

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান নিশ্চিত করে বলেন, ‘হলহলিয়া নদী এলাকাটি সরেজমিন দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী সেতুর জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’