জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলে তারা আর কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না— এমন বিধান যুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ২০(সি) ধারা সংশোধন করা হয়েছে। এ অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি চাকরি বা অন্য কোনো সরকারি পদেও অযোগ্য হবেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে গত সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
অধ্যাদেশের ফলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ, তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। একইভাবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম, এবং বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ছাড়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও সম্প্রতি ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে,
অভিযুক্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হতে বা থাকতে পারবেন না।
কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান— যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের সদস্য, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবেও নির্বাচিত হতে পারবেন না।
প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া বা অন্য কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকা নিষিদ্ধ।
তবে ট্রাইব্যুনালে খালাসপ্রাপ্ত বা অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তারা দ্রুত কাজ শুরু করেছেন। প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তাজুল ইসলাম আরও জানান, আদালতে চলমান বিভিন্ন মামলায় সাক্ষীরা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য এখন বিচারিক নথি হিসেবে গণ্য। ভবিষ্যতে দলটির বিরুদ্ধে তদন্তে এসব তথ্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততাও পরবর্তীতে যাচাই করা হবে।”