সুরা ইখলাস চার আয়াতবিশিষ্ট ছোট একটি সুরা। কিন্তু গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ এবং সওয়াবের দিক দিয়েও অনেক নেকি ও ফজিলতপূর্ণ একটি সুরা। কারণ এতে আল্লাহ তাআলার সত্তা ও গুণাবলির পরিচয় বর্ণিত হয়েছে এবং আল্লাহর একত্ববাদ ও শিরকমুক্ত তাওহিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের প্রধান ও প্রাথমিক বিষয়ের সমষ্টির কারণে কোনো কোনো মুফাসসির এই সুরার নাম রেখেছেন ‘সুরাতুত তাওহিদ’ নামে।
এখানে এই সুরা পাঠ করার কিছু ফজিলত ও নেকির কথা আলোচনা করা হলো—
১. এই সুরাকে বলা হয় কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বলেন, ...আল্লাহুল ওয়াহিদুছ ছামাদ অর্থাৎ সুরা ইখলাস হলো কোরআনের তিন ভাগের এক ভাগ-এক-তৃতীয়াংশ। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৫)
২. এই সুরা পাঠকারীর প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা ও জান্নাত অবধারিত করে। আয়েশা (রা.) বলেন, এক সাহাবিকে রাসুল (সা.) যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে সেই সাহাবি নামাজের ইমামতি করতেন আর প্রত্যেক রাকাত শেষে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতে আল্লাহর সত্তা ও গুণাগুলির কথা আছে, তাই আমি এই সুরাকে ভালোবাসি। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা তাকে বলো, এই সুরাকে ভালোবাসার কারণে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন। (বুখারি : ৭৩৭৫)
৩. এই সুরা ১০ বার পাঠ করলে তার জন্য জান্নাতে প্রাসাদ তৈরি করা হবে। নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দশবার সুরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন।’ (দারামি, হাদিস : ৩৪৭২, তাফসিরে ইবনে কাসির)
৪. সুরা ইখলাস তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআনের শ্রেষ্ঠ তিনটি সুরার একটি। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৩৩৪, মুজামে তাবারানি, হাদিস : ৭৪২)
৫. সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার সুরা ইখলাস পড়লে সব বিপদ-আপদ দূর হয়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক বর্ষণমুখর খুব অন্ধকার কালো রাতে আমাদের নামাজ পড়ানোর জন্য আমরা রাসুল (সা.)-কে খুঁজছিলাম। অবশেষে তাঁকে পেয়ে গেলাম।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা নামাজ পড়েছ? আমি কিছুই বললাম না। তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তৃতীয়বার বললেন, বলো! আমি বললাম, হে আল্লাহ! আমি কি বলব? তিনি বলেন, তিনবার কুল হু ওয়াল্লাহু (সুরা ইখলাস) সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়বে, এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)