বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের টাকা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা, ঝুঁকিতে উচ্চশিক্ষা
প্রকাশকালঃ
১৮ মে ২০২৪ ০১:০৯ অপরাহ্ণ ৩৭৫ বার পঠিত
বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টের ফেলোশিপ নিয়ে বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে টিউশন ফির টাকা সময়মতো পাচ্ছেন না। এতে এসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা নেওয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এ ব্যাপারে নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। ওই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলমান ডলার সংকটের কারণে বিদেশে অধ্যয়নরত এসব শিক্ষার্থীর কাছে অনেক সময় নির্দিষ্ট অর্থ পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তবে সংকট সমাধানে তারা যথাসম্ভব চেষ্টা করার কথা জানিয়েছে।
বিশ্বমানের বিজ্ঞান ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি, মাস্টার ডিগ্রিসহ উচ্চতর শিক্ষায় ফেলোশিপ দেয় বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট। ফেলোশিপের অধীনে প্রতি মাসে ট্রাস্ট থেকে টিউশন ফি দেওয়ার কথা থাকলেও তিন-চার মাস ধরে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। নির্ধারিত সময়ে টিউশন ফি দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলসহ পড়াশোনার যাবতীয় কর্মকাণ্ড বন্ধের নোটিশ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এতে ফেলোশিপের আওতায় বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শিক্ষাজীবন নিয়ে হুমকির মুখে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, এই ট্রাস্ট থেকে ফেলোশিপ পেয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, জার্মানিসহ বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপের অর্থে পড়াশোনা করছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ফেলোশিপের অর্থ কিস্তি আকারে বছরে চারবার দেওয়া হয়। বিস্তারিত জানতে তিনি ট্রাস্টের উপপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
ট্রাস্টের উপপরিচালক মোস্তাক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত ডলার সংকটের কারণে ফেলোশিপের অর্থ পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। অর্থছাড়ের প্রক্রিয়ায়ও কিছুটা বিলম্ব হয়। তিন মাসের টিউশন ফি প্রতি তিন মাস পর পর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে আসে। যেমন—এপ্রিল, মে ও জুন মাসের টিউশন ফির অর্থ এপ্রিল মাসেই দিয়ে দেওয়া হয়। তবে মাঝেমধ্যে এই অর্থ দিতে দেরি হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত টিউশন ফি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থীকে নোটিশ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল কর্তৃপক্ষ। নোটিশে বলা হয়, ‘টিউশন ফি বকেয়া থাকার কারণে আপনার স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে। ফলে সার্ভিস অ্যাকসেসসহ পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে না।’ একই কারণে বাংলাদেশের অন্য এক শিক্ষার্থীকে নোটিশ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিডস। সেখানে বলা হয়, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে টিউশন ফি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।’
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে দেওয়া পৃথক এক নোটিশে জানানো হয়, ‘শিক্ষার্থীর টিউশিন ফি বকেয়া থাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টকে ই-মেইল দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে ট্রাস্টের ফেলোশিপের চুক্তি বাতিল করা হবে।’ ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত টিউশন ফি বকেয়া পড়ার কারণে নোটিশ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফেলোশিপের অনিয়মিত অর্থের কারণে আগের দুই সেমিস্টারের টিউশন ফি দিতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর কত অপেক্ষা করবে?’
জাপানে অধ্যয়নত অন্য এক শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সময়মতো টিউশন ফি দিতে না পারায় বাংলাদেশি ১০ হাজার টাকার সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা দিতে হবে। অথচ অনিয়মিত টিউশন ফির দায় আমার ছিল না।’ অতীতেও বিভিন্ন কারণে এমন সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী। উচ্চশিক্ষায় এমন পরিস্থিতি কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষাবিদ এ কে আজাদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেশের চলমান সংকট সম্পর্কে জানিয়ে চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ট্রাস্ট থেকে এই চিঠি দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। ফলে টিউশন ফি দিতে তিন-চার মাস সময় চেয়ে চিঠি দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্যই তা সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করবে। দেশে দেশে আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তারাও জানে। তিনটি বিশেষ দিক বিবেচনায় ফেলোশিপের অর্থ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে টিউশন ফি, বিদেশে বসবাসের ব্যয় এবং শিক্ষা উপকরণ ব্যয়।
বিদেশে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, এই ফেলোশিপের অর্থের পরিমাণ অন্যান্য ফেলোশিপের তুলনায় কম। অন্যান্য ফেলোশিপের অর্থ মার্কিন ডলারে নির্ধারণ করা হলেও এই ফেলোশিপের অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ডলারের তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য ফেলোশিপের তুলনায় এই ফেলোশিপের অর্থ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা বিদেশে বসবাসের খরচের তুলনায় খুব কম। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি গবেষণায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার কারণে বিদেশে বাড়তি আয়ের সুযোগও কম। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত পিএইচডির একজন শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে জানান, ফেলোশিপের অর্থ বাড়ানোর বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সমাধান বা আশ্বাস পাওয়া যায়নি।