২২ হাজার ১০১টি ছিন্নমূল পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর দেবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশকালঃ ০৯ আগu ২০২৩ ১২:৪৬ অপরাহ্ণ ২৩৫ বার পঠিত
২২ হাজার ১০১টি ছিন্নমূল পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর দেবেন প্রধানমন্ত্রী

সারি সারি লাল-সবুজের ঘর। এই ঘরগুলো আজ হস্তান্তর করা হবে। গতকাল পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা, কেউ আর গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। এর ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে আরো ১২টি জেলায় ২২ হাজার ১০১টি ছিন্নমূল পরিবারের মাঝে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর হস্তান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪১টি জেলার আরো ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে, ফলে মোট উপজেলার সংখ্যা হবে ৩৩৪ এবং এই ১২টি জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২১।


আজ যাঁদের ঘর দেওয়া হচ্ছে এর মধ্যে অনেকে কিছুদিন ধরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাঁদের নতুন ঠিকানায় ঠাঁই পেতেছেন। তাঁদের মধ্যে পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কাশেম শেখ (৪৭) একজন। পেশায় তিনি ভ্যানচালক ও দিনমজুর। জন্মের পর থেকে নিজের জমি দূরের কথা, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু ছিল না।

আজ এখানে, কাল ওখানে করে ২৫ বছর মানুষের বাড়িতে ছাপরা ঘরে থেকেছেন। ছয় ছেলেমেয়ের সংসার নিয়ে শিকার হয়েছেন অনেক লাঞ্ছনার।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নতুন ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কাশেম শেখ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরের জায়গায় থাকা, থাকা হলো! কটু কথাবার্তা শুনতে হতো প্রতিনিয়ত এবং ছেলেমেয়েদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। এখন তারা নিজেদের মতো করে খেলতে পারছে, স্কুলে যেতে পারছে।’

নিজের ঘরটি (৪৮ নম্বর) দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন পাকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর হবে আমাদের কল্পনা করিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য লাখো-কোটি দোয়া, উনার ইচ্ছায় আল্লাহর রহমতে আমাদের ঠিকানা হলো।’


কাশেম শেখের মতো আহম্মেদনগর ইউনিয়নের আরো ৫৩টি ছিন্নমূল ও উদ্বাস্তু পরিবারকে আজ ২ শতক জমিসহ ঘর দেওয়া হবে।

এর মধ্যে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া দুই সন্তানের জননী ববিতা আক্তার (২৮) জানান, বিচ্ছেদের পর দুই সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কয়েক বছর মানুষের বাড়িতে, রাস্তার কিনারায় কাটিয়েছেন। এখন জমিসহ ঘর পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।


ববিতা বলেন, ‘এখন মা-মেয়ে কাঠের মিলে কাজ করেও সুন্দরভাবে চলতে পারি। আগে কত রোদে পুড়েছি, আর বৃষ্টিতে ভিজেছি বলে শেষ করতে পারব না। আগের তুলনায় অনেক শান্তিতে আছি।’ তাঁর পাশের ঘরের বাসিন্দা রত্নাও জমিসহ ঘর পেয়ে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন বলে জানান।

এই আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া রাজমিস্ত্রি সাব্বির বলেন, ‘আগে ঠিকানা ছিল না, তাই যেখানেই থাকতাম কেমন যেন অপরাধীর মতো লাগত। কে কখন তুলে দেয়, এ ভয়ে। সে ভয় প্রধানমন্ত্রী দূর করেছেন। দিনশেষে  আমাদের একটা ঠিকানা হইছে।’

দুই সন্তানের মা হোছনা (৪৫) জানালেন, আধাপাকা ঘরটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ ও পানি আছে। সব মিলিয়ে পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবেন। কাশেম, ববিতা ও সাব্বিরদের মতো আপন ঠিকানা পাওয়া সবার ঘরে ঘরে যেন ঈদের আনন্দ বইছে।

পাবনার সুজানগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম কালের বলেন, ‘এখানে যারা ঘর পেতে যাচ্ছেন সবার মাঝে আনন্দের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা ও কর্মসংস্থানের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে।’


আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের আওতায় এটি দ্বিতীয় পর্যায়। এর আগে ২২ মার্চ, ২০২৩-এ দ্বিতীয় ধাপের অধীনে প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়।

২৩ জানুয়ারি, ২০২১-এ প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, ২০ জুন, ২০২১-এ দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষের সময় তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর বিতরণ করা হয়েছে। আজকের ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মুজিববর্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ মাসে মোট ঘরের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১।

গত সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন।