যে দোয়া পাঠে প্রতিকার মেলে কঠিন বিপদে

প্রকাশকালঃ ২৩ আগu ২০২৩ ০৩:৫৭ অপরাহ্ণ ১৭৭ বার পঠিত
যে দোয়া পাঠে প্রতিকার মেলে কঠিন বিপদে

ম্মে সালামা (রা.)-এর আসল নাম ছিল হিন্দ। কিন্তু অত্যধিক দান-সদকার কারণে ‘উম্মুল মাসাকিন’ ডাকনামে তিনি পরিচিত হন। কোরাইশের বনি মখজুম গোত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। (আল ইসাবা, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৫)

প্রথমে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তিনি এবং তাঁর স্বামী আবু সালামা ছিলেন তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম গ্রহণের মতো হিজরতেও উভয়ে ছিলেন সহযাত্রী। প্রথমে হাবশা বা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। পরে উভয়ে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় হিজরতের সময় কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হন।

তিনি স্বামী আবু সালামা (রা.)-কে নিয়ে বেশিদিন কাটানোর সুযোগও লাভ করেননি। আবু সালামাকে অনেক সময় জিহাদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়। জিহাদের ময়দানে আবু সালামা (রা.)-এর বাহুতে হাতমির তীর বিদ্ধ হয়। এক মাস চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন।


এর দুই বছর ১১ মাস পর নবী (সা.)-এর নির্দেশে তাকে কতন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে তিনি ২৯ দিন কাটান। (আল ইসাবা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৮৬)

হিজরী ৪ সালের সফর মাসের ৮/৯ তারিখে তিনি মদিনা ফিরে আসেন। এবারও তীব্র আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ আঘাতে আর সেরে উঠতে পারেননি। একই বছর জুমাদাল উখরার ৯ তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন। (জুরকানি তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৫)

উম্মে সালামা নবী (সা.)-কে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ জানাতে আসেন। মৃত্যুসংবাদ শুনে নবী (সা.) নিজে তাঁর গৃহে গমন করেন। নবী (সা.) তাঁকে ধৈর্য ধারণের দীক্ষা দেন এবং বলেন, ‘তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করো এবং বলো : ‘হে আল্লাহ, আমাকে তার চেয়ে উত্তম উত্তরাধিকারী দাও।’ উম্মে সালামা (রা.) এই দোয়ার ফলস্বরূপ উত্তম স্বামী হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পান।


এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের ওপর মুসিবত এলে যদি সে বলে, আল্লাহ যা হুকুম করেছেন—‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এ দোয়া পাঠ করে—‘আল্লা-হুম্মা’ আজুরনি ফি মুসিবাতি ও আখলিফ লি খাইরাম মিনহা।’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমাকে আমার মুসিবতে সাওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করো) তাহলে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন)।

উম্মে সালামা (রা.) বলেন, এরপর যখন আবু সালামাহ ইন্তেকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কোনো মুসলিম আবু সালামা (রা.) থেকে উত্তম? তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি হিজরত করে রাসুল (সা.)-এর কাছে পৌঁছে গেছেন। এতদসত্ত্বেও আমি এ দোয়াগুলো পাঠ করলাম। এরপর মহান আল্লাহ আবু সালামার স্থলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমার কাছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিয়ের পয়গাম পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হাতিব ইবনু আবু বালতাআ (রা.)-কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা কন্যা আছে আর আমার জিদ বেশি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তার কন্যা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব, যাতে তিনি তাকে তাঁর কন্যার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দোয়া করব, যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (মুসলিম, হাদিস : ২০১১)

নবীজির পবিত্র স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রা.)-এর পর সবচেয়ে বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নারী উম্মে সালমা (রা.)। তিনি চতুর্থ হিজরিতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নবীজির স্ত্রী হওয়ার আগে ও পরে বিভিন্ন সময় জাতীয় জীবনের জটিল সমস্যা সমাধানে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন মহীয়সী এই নারী। যার কারণে ইতিহাস তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধানের রাজনৈতিক উপদেষ্টার মর্যাদায় স্মরণ করে থাকে।