দৃষ্টিশক্তি হারালেও, হারে নাই লোকশিল্পী প্রদীপ কৃষ্ণ দাস

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৫:১৫ অপরাহ্ণ   |   ৪০ বার পঠিত
দৃষ্টিশক্তি হারালেও, হারে নাই লোকশিল্পী প্রদীপ কৃষ্ণ দাস

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

ভুল চিকিৎসার কারণে মাত্র ৩ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন কুড়িগ্রামের লোকশিল্পী প্রদীপ কৃষ্ণ দাস। তবে জীবনযুদ্ধে হার মানেননি তিনি। ৫ বছর বয়সে একটি পুরোনো হারমোনিয়াম কিনে দেন মা পার্বতী দেবী। এর পর প্রদীপ নিজেই হারমোনিয়াম বাজানো শেখেন। ১১ বছর বয়সে হাতে তুলে নেন বাঁশি। বাঁশি বাজাতে বাজাতেই আকৃষ্ট হন সংগীতের প্রতি। দৃষ্টি না থাকলেও সুরেলা কণ্ঠের আশীর্বাদে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি প্রদীপকে। বর্তমানে ২৪ বছর বয়সী প্রদীপ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভজন, কীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলি, ভাওয়াইয়া, লোকসংগীত গেয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। 
 

প্রদীপ দাসের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোপালের খামার গ্রামে। চার ভাইবোনের মধ্যে প্রদীপ দ্বিতীয়। বাবা লক্ষ্মণ কৃষ্ণ দাস কৃষক। প্রদীপ জানান, তিনি নিজেকে কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করেন। চোখে দেখতে না পারলেও মনের আলোয় আশপাশের প্রতিটি বিষয় অনুধাবন করতে পারেন। ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অন্ধত্বকে জয় করে টানা ১৬ বছর তিনি গান গেয়ে বেড়ান বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। এ কাজে তাঁকে উৎসাহ দেন মামা দামোদর কৃষ্ণ দাস। মামার সঙ্গেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে যা পান, সেই অর্থে নিজের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। চোখের আলো না থাকার কারণে পরিবারে বোঝা হয়ে থাকেননি। 
 

সম্প্রতি তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, একটি সাধুসংঘে কীর্তন গাওয়ার ডাক পেয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রদীপ। ছোট ভাইয়ের সাহায্যে বাদ্যযন্ত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রদীপ জানান, সংগীতের ধরন ও তাল অনুযায়ী একাই হারমোনিয়াম, বাঁশি, মৃদঙ্গ, ঢোল বাজিয়ে গান পরিবেশন করতে পারেন তিনি।
 

প্রদীপের মা-বাবা বলেন, দীর্ঘদিন চক্ষু বিশেষজ্ঞদের দেখিয়েছেন। তারা বলেছেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে প্রদীপ হয়তো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন। সেই আশা নিয়ে একটু একটু টাকা জমাচ্ছেন। পাশাপাশি সমাজের সুধীজনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।  
 

প্রদীপের মা পার্বতী দেবী বলেন, ৩ বছর বয়সে ছেলের পেট ও মাথাব্যথা হয়। সে সময় কবিরাজ, ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। কবিরাজের কথা মেনে খাইয়েছিলেন বনাজি ওষুধ। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে প্রদীপ অন্ধ হয়ে যায়। চোখে না দেখার কারণে ছোটবেলায় থেকেই প্রদীপ মন খারাপ করে থাকত। পরে নিজ আগ্রহেই হারমোনিয়াম, বাঁশি, করতাল বাজানো শেখে।

 
কুড়িগ্রাম সদরের সমাজসেবা কর্মকর্তা এসএম হাবিবুর রহমান বলেন, প্রদীপ দাসের বিষয়টি আমরা জেনেছি। তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।