সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বাবাকে হত্যা করা সেই ভিডিওর পেছনের আসল কাহিনি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১১ মে ২০২৫ ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ   |   ৭৩ বার পঠিত
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বাবাকে হত্যা করা সেই ভিডিওর পেছনের আসল কাহিনি

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-

 

 

সাভারের একটি বাসায় বাবাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার যে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, তার পেছনের গল্পটি ছিল আরও করুণ ও বিভ্রান্তিকর।

 

মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই কিছুটা উশৃঙ্খল প্রকৃতির ছিল। বাবা আব্দুস সাত্তার শুরুতে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেও মেয়ের প্রতিক্রিয়া দেখে ধীরে ধীরে তা থেকে সরে আসেন। ভেবেছিলেন—মেয়ে বড় হয়েছে, স্বাধীনভাবে চলুক।

 

একপর্যায়ে মেয়েটি সাভারের ফ্ল্যাট বাসায় আরও দুই বান্ধবীকে নিয়ে এসে সাবলেট হিসেবে রাখতে শুরু করে। প্রথমে কিছু না বললেও, পরে আব্দুস সাত্তার নিজে ডাইনিং রুমে গিয়ে থাকতে শুরু করেন—যাতে মেয়ের সম্মানে আঘাত না লাগে।

 

মেয়েকে অনেক ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে খেয়াল করেন, মেয়ে ও তার বান্ধবীরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে এবং বেপরোয়া আচরণ করছে। এসব দেখে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং মেয়েকে অনুরোধ করেন এসব ছেড়ে দিতে। পাশাপাশি তার বান্ধবীদের বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেন।

 

এই কথাতেই মেয়ের ক্ষোভ বেড়ে যায়। শুরু হয় ঝগড়া, এমনকি এক পর্যায়ে সে বাবার গায়েও হাত তুলতে উদ্যত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্দুস সাত্তার থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যাতে মেয়েকে ফেরানো যায় সঠিক পথে।

 

কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং মেয়ে আরও উগ্র হয়ে ওঠে। বান্ধবীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকায় সন্দেহ বাড়তে থাকে আব্দুস সাত্তারের মনে। এক রাতে তিনি মেয়ের রুমে গিয়ে তাদের তিনজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। তিনি জানতে পারেন, মেয়েটি এবং তার বান্ধবীরা সমলিঙ্গের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত।

 

এরপর আব্দুস সাত্তার স্পষ্টভাবে মেয়েকে বলেন, বান্ধবীদের বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে। আবারও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়, হাতাহাতি হয়। তিনি নিজের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও কোনো সমাধান পাননি।

 

অন্যদিকে, মেয়ে বুঝে যায়—তার বাবা তার এই সম্পর্ক ও নেশার জগতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই সে পরিকল্পনা করে বাবাকে পথ থেকে সরানোর।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক ভোরে মেয়েটি নিজ বাসায় ঘুমন্ত বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাজায় ধর্ষণের একটি নাটক, যাতে সহানুভূতি পাওয়া যায় এবং জামিনে মুক্তি সহজ হয়।

 

ভিডিওতে সে নিজেই বলে—"আমাকে যেন জনগণ সাপোর্ট করে জামিনের ব্যবস্থা করে দেয়।"

 

এমনকি ২০২৩ সালেও মেয়েটি তার বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের একটি মিথ্যা মামলা করেছিল, যার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় আদালত থেকে জামিন পান আব্দুস সাত্তার।

 

মেয়েকে সঠিক পথে ফেরাতে চেয়েছিলেন আব্দুস সাত্তার। তিনি চাইতেন, তার মেয়ে অনৈতিক সম্পর্ক ও বিপথগামীতা থেকে বেরিয়ে এসে একজন সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক।

 

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল তার জন্য। একমাত্র মেয়ের হাতেই নিষ্ঠুরভাবে খুন হলেন ৫৬ বছর বয়সী এই বাবা।