অনলাইন ডেস্ক:-
ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার আগেই, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েনের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক হিসেবে অভিহিত করেছেন, এবং দাবি করেছেন যে, ইউক্রেনই যুদ্ধ শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যে, জো বাইডেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্ক এখন চরম সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। খবরটি বিবিসি থেকে।
বিবিসির শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকাশ্য বিরোধ শুধু ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও বড় ধরনের সংকেত দিচ্ছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তাঁর পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের ১৯৪৯ সালের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ওই সময়ে, ট্রুম্যান ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ন্যাটো জোটের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য হবে।
এই উদ্বেগের মূলে রয়েছে ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের স্পষ্ট ইঙ্গিত। ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, অন্যদিকে পুতিনের জন্য বড় ধরনের ছাড় দেয়ার পথ তৈরি করছেন—যা ইউক্রেনকেও শেষ পর্যন্ত মানতে হবে। এর ফলে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা এখন দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে, এবং ইউরোপীয় নেতারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে পড়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় জেলেনস্কির প্রতি আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প। শুধু খনিজসম্পদ চুক্তি স্বাক্ষর না করাই নয়, ইউক্রেনীয়রা বিশ্বাস করে যে তারা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে এবং যদি পুতিনকে প্রতিহত করা না যায়, তবে তিনি যেকোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন। এজন্যই জেলেনস্কি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির দাবি করেছেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের হস্তক্ষেপের পর, আলোচনা উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় রূপ নেয়। এর ফলে, কূটনৈতিক মহলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে—অথবা জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করা, কিংবা তাকে দোষারোপ করে পরিস্থিতিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা।
বিবিসি বলছে, যদি ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, কতটা কার্যকরভাবে এবং কতদিন ধরে?
প্রসঙ্গত, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বৈঠক শেষে, পূর্ব নির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই হোয়াইট হাউস থেকে চলে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তিতে সইও করেননি।
হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর, ঐতিহ্য হিসেবে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে, জেলেনস্কি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর হোয়াইট হাউস জানায় যে, সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে। কিছু সময় পরে, জেলেনস্কি এবং তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে যান।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে, ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি "যুক্তরাষ্ট্র ও এর শ্রদ্ধার জায়গা, ওভাল অফিসকে অসম্মান করেছেন"। তিনি আরও বলেন, "যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসতে পারেন।"