প্রার্থী বাছাইয়ে ধীরগতি, চলছে নানা যোগ-বিয়োগ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩৫ অপরাহ্ণ   |   ৫৩ বার পঠিত
প্রার্থী বাছাইয়ে ধীরগতি, চলছে নানা যোগ-বিয়োগ

অনলাইন ডেস্ক-ঢাকা প্রেস


 

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যস্ততা বেড়েছে। গণভোট, সংস্কার ও আইনশৃঙ্খলা– এসব বিষয় নিয়ে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ থাকলেও দলগুলো এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগী। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে কার্যক্রম শুরু করায় জামায়াত প্রায় সব প্রস্তুতি গুছিয়ে নিয়েছে। বিএনপি মাঠে গণসংযোগ শুরু করলেও এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। পোলিং এজেন্ট নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি। অন্যদিকে এনসিপি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারে সময় দিচ্ছে।
 

বিএনপি দেরিতে প্রস্তুতি শুরু করলেও এখন গতি আনতে চেষ্টা করছে। যদিও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি, তবু প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্তরা মাঠে নেমে গণসংযোগ করছেন। তারা পোলিং এজেন্ট বাছাই ও প্রশিক্ষণ প্রস্তুত করছেন, একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। কেন্দ্রীয়ভাবেও প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে, যদিও এখনো দলীয় প্রার্থীদের প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।


সামাজিক মাধ্যম গুরুত্ব পাচ্ছে

বিএনপি মনে করছে, এবারের নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে লক্ষ্যেই তৃণমূল ও অনলাইন যোগাযোগ শক্তিশালী করতে সাতটি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে সাতজন সদস্য এবং একজন করে টিমপ্রধান থাকবেন। তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের কাজ তফসিল ঘোষণার পর শুরু হবে।


মনোনয়নপ্রক্রিয়ায় জটিলতা

৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করার পর অর্ধশতাধিক আসনে মনোনয়ন বিদ্রোহ দেখা দেয়। বাকি ৬৩ আসনে এখনও প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, সেখানেও চলছে ভারসাম্যহীনতা ও যোগ-বিয়োগের পালা। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য— তারেক রহমান দেশে ফিরলে প্রক্রিয়ায় গতি আসবে। তার আগেই মাঠ জরিপের ভিত্তিতে প্রার্থীদের অসংগতি নিরসন এবং আসনভিত্তিক জটিলতা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “১৬ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি। নতুন প্রজন্ম অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে উৎসবমুখর ভোট আয়োজনের জন্য আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। ২৩৭ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা হয়েছে, অন্যান্য প্রক্রিয়াও ধাপে ধাপে এগোবে।”


শতাধিক আসনে প্রস্তুতির ঘাটতি

ঘোষিত ২৩৭ আসনের মধ্যে অর্ধশতাধিক আসনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কার্যক্রম শুরু কঠিন হয়ে পড়েছে। ৬৩ আসনে প্রার্থী না থাকায় সেখানে প্রস্তুতি এখনো শুরুই হয়নি। এসব আসনের অনেকগুলো মিত্র বা সমমনা দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে। জোট প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা থাকায় অনেক নেতা পিছিয়ে পড়েছেন। সব মিলিয়ে শতাধিক আসনে বিএনপি এখনও অপ্রস্তুত।


আসনভিত্তিক প্রচারণা

যেসব আসনে বিরোধ নেই, সেখানে প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি পোলিং এজেন্ট নির্ধারণ, প্রশিক্ষণ এবং বিকল্প এজেন্ট তৈরিতে মনোনিবেশ করছেন। নিজেদের এলাকার সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড টানিয়ে বিএনপির উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা তুলে ধরা হচ্ছে।
 

মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালু রয়েছে। তরুণ ও নারী ভোটারদের আকর্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে। নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আশ্বাসও দিচ্ছেন নেতারা।
 

ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপির প্রার্থী আমিনুল হক বলেন, “আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়ন হয়নি, হয়েছে তাদের ব্যক্তিগত উন্নতি। জনগণের মতামত নিয়ে আমরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করব।”


প্রতিপক্ষের কৌশল পর্যবেক্ষণ

বিশেষ করে জামায়াতপন্থী প্রার্থীদের কৌশল নজরে রাখছেন বিএনপির প্রার্থীরা। মসজিদ, মাদ্রাসা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রচার ঠেকাতে তারা সতর্ক। বিশেষভাবে নারী কর্মীদের প্রচারণা এবং ধর্মীয় বক্তৃতার মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়ে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
 

ভোলা-চরফ্যাশন আসনের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, “রাজনীতি হবে সামনাসামনি। গোপনভাবে কিংবা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা ঠিক নয়। জনগণই তা প্রতিহত করবে।”


ডিজিটাল প্রচারণা জোরদার

সামাজিক মাধ্যমে পিছিয়ে থাকা বিএনপি নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। ১৫ সদস্যের টিমের নেতৃত্বে থাকবেন ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার। তিনি ২০টি আসনের সমন্বয় করবেন। প্রতিটি আসনে দুজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট থাকবে। এতে দলীয় সাংগঠনিক শক্তি যেমন বাড়বে, তেমনি অনলাইনে ‘বট বাহিনী’র বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়া হবে।
 

এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য— নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই দলের বার্তা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া।


🔹 সারসংক্ষেপে:

  • প্রার্থী বাছাইয়ে ধীরগতি ও বিদ্রোহ চলছে।

  • শতাধিক আসনে এখনও কার্যকর প্রস্তুতি নেই।

  • সামাজিক মাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জোরদার প্রচারণার উদ্যোগ।

  • কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি এগোচ্ছে।

  • প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের প্রচারণা কৌশল নিবিড় পর্যবেক্ষণে বিএনপি।